রংপুরে রওশনের প্রার্থী জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম সাদ কাদেরের ইয়াছির

আগামী ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও পৃথক অবস্থান নিয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) বিবাদমান দুই গ্রুপ। দলটির চেয়ারম্যান দাবিবার রওশন এরশাদসহ তার অনুসারীরা দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন এরশাদ-রওশনের পুত্র রাহগির আল মাহিরকে (সাদ এরশাদ)। দলের আরেক চেয়ারম্যান দাবিদার জিএম কাদেরসহ তার অনুসারীরা দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছেন রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াছিরকে। দুই পক্ষই আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে যাচ্ছে।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার পার্লামেন্টারি বোর্ডে গতকাল তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তারা হলেন- এসএম ইয়াছির, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব আবদুর রাজ্জাক। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী এরশাদ-জিএম কাদেরের ভাগনি ড. মেহেজেবুন্নেসা রহমান (টুম্পা) সাক্ষাতকার না দিলেও বোর্ডের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে গতকাল সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

জিএম কাদেরের পক্ষে অবস্থান নেওয়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু গতকাল সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে জানান, রংপুর উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শনিবার ঘোষণা করা হবে। উল্লেখ্য, মনোনয়ন প্রত্যাশী টুম্পা হলেন জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রী। পার্লামেন্টারি বোর্ডে টেলিফোনে টুম্পার সাক্ষাতকারের বিষয়ে বাবলু বলেন, ‘আসলে টুম্পা এখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে এতটা সিরিয়াস নন। আর টেলিফোনে সাক্ষাতকার দেওয়ার বিষয়টি ফিরোজ ভাই (কাজী ফিরোজ রশীদ) রসিকতার ছলে বলেছেন।’

অন্যদিকে, রওশন এরশাদের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নেওয়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম গতকাল ইত্তেফাককে জানান, রংপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য রওশন এরশাদের নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার গঠিত ১৩ সদস্যের পার্লামেন্টারি বোর্ড আজ বৈঠকে বসে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেবে।

দলের দুই পক্ষই পৃথক প্রার্থী ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করায় জাপার নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোন পক্ষের মনোনীত প্রার্থীকে জাপার প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, ‘লাঙ্গল’ প্রতীত কাকে বরাদ্দ দেওয়া হবে? এব্যাপারে জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, লাঙ্গল প্রতীক কে পায় সেটিই এখন দেখার বিষয়। ইসি যার চিঠি গ্রহণ করবে বোঝা যাবে সেই পক্ষই ক্ষমতাধর বা প্রভাবশালী। ইসির সিদ্ধান্তের ওপরই এখন অনেকটা নির্ভর করছে দলের কর্তৃত্ব কার হাতে যাবে।

জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদ বৃহস্পতিবারই ইসিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে তার ছাড়া অন্য কারও স্বাক্ষর গ্রহণ না করতে তিনি ইসিকে অনুরোধ জানান। অন্যদিকে, এরশাদ জীবিত থাকাকালে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দের জন্য ইসিতে চিঠি দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব রাঙ্গাকে। জানা গেছে, রাঙ্গার কাছ থেকে লিখিতভাবে সেই ক্ষমতা দুইদিন আগে নিজের কাছে নিয়েছেন জিএম কাদের। নিজেকে দলের একমাত্র বৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করে জিএম কাদেরও ইসিকে চিঠি দিয়েছেন।

‘সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি’

জাপায় সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিয়ে নেতা-কর্মীদের মনে এখন একটিই প্রশ্ন, ক্ষমতা কোন দিকে? শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা যেদিকে থাকবে নেতা-কর্মীরাও সেদিকেই হেলবেন। এব্যাপারে জাপার এখনকার গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা সবাই এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।’

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের নিয়ে কাদেরের যৌথ সভা

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে গতকাল বনানী কার্যালয়ে জরুরি যৌথসভা করেছেন জিএম কাদের। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আলহাজ্ব সাহিদুর রহমান, এ্যাড. শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এ্যাড. সালমা ইসলাম এমপি, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভ রায়, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনির, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, এ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ দিদার বখ্ত, কাজী মামুনুর রশীদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নাজমা আখতার এমপি, আব্দুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া ও মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল রানা এমপি। এছাড়া আহসান আদেলুর রহমান এমপি ও নুরুল ইসলাম তালুকদারও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া টিপু ও সোহেল রানা বৃহস্পতিবার রওশনের সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন।

কাদেরের সভায় আনিস-ফখরুলের বহিষ্কার দাবি

জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের যৌখ সভায় রওশন এরশাদের পক্ষে প্রকাশ্যে সক্রিয় থাকা জাপার দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও ফখরুল ইমামকে দল থেকে বহিষ্কারের জোর দাবি করেছেন অনেকে। যৌথসভার মাঝখানে সংবাদ সম্মেলনে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, যারা রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন তারা গঠনতন্ত্র্ত্রবিরোধী অপরাধ করেছেন। তারাই সাধারণ জনগণ এবং জাপার নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভ্রান্ত্রি ছড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুরে রওশনের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল

এদিকে, রওশন এরশা কে প্রত্যাখান করে তার বিরুদ্ধে গতকাল রংপুরে ঝাড়ু মিছিল করেছে দলের রংপুর জেলা মহিলা পার্টি। এসময় তারা রওশন এরশাদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কারেরও দাবি জানান। বিকালে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয় থেকে ঝাড়ু মিছিল বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় মিছিল থেকে রওশনের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে বিদ্রুপ স্লোাগান দেন মহিলা পার্টির নেতা-কর্মীরা।

 

খবর সারাবেলা/ ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ টি আই