একটা ছবি! যা সৃষ্টির পাঁচ শ’ বছর পরও বার বার উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রে।
একটা ছবি। যা সৃষ্টির পাঁচ শ’ বছর পরও বার বার উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রে। যা আজ পর্যন্ত আঁকা যাবতীয় উঁচুদরের ছবির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চিত। যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কালি খরচ করেছেন দেশ বিদেশের চিত্র সমালোচকেরা, সেই ছবি, ‘মোনা লিসা’, এক অতি সাধারণ স্নায়ুরোগের কারণে কখনো সম্পূর্ণই করে উঠতে পারেননি সৃষ্টিকর্তা লিওনার্দো দা ভিঞ্চি।
শেষজীবনে আঁকা ওই ছবি মৃত্যুর দু’বছর আগে পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন দা ভিঞ্চি। বহুবার চেষ্টাও করেছেন সম্পূর্ণ করার। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত পারেননি উলনা পালসি নামের এক স্নায়ু বিকলকারী রোগে আক্রান্ত হওয়ায়। ওই রোগে শিল্পীর ডান হাত আংশিক অসাড় হয়ে যায়। আঙুলগুলো কুঁকড়ে যায়। ফলে ওই হাতে ছবি আঁকা তো দূর, কোনো বাহ্যিক সাহায্য ছাড়া সামান্য নাড়াচাড়া করাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর তাই বিখ্যাত চিত্রশিল্প ‘মোনা লিসা’-সহ লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বেশ কিছু ছবি অসম্পূর্ণই থেকে গেছে। তাছাড়া মৃত্যুর আগের পাঁচ বছর তিনি নতুন কোনো ছবিও আঁকেননি।
লিওনার্দোর স্নায়ুরোগ সংক্রান্ত এই বিশদ বিবরণ সম্প্রতিই প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিনে। দুই ইতালীয় চিকিৎসক- ডেভিড লাজেরি (প্লাস্টিক সার্জন) এবং কার্লো রোসি (স্নায়ুবিশারদ) বিশদ গবেষণার পর ওই প্রতিবেদন লিখেছেন। তারা জানিয়েছেন, ১৫০৭ থেকে ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে আঁকা দা ভিঞ্চির একটি প্রতিকৃতি দেখেই তারা ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ষোড়শ শতকের শুরুর দিকে দা ভিঞ্চির ওই প্রতিকৃতিটি বানানো হয়েছিল মিলানে। ছবিটি আঁকেন দা ভিঞ্চির অতি ঘনিষ্ঠ আরেক শিল্পী গিওভান অ্যামব্রোগিয়ো ফিনিও। লাল চক দিয়ে আঁকা ওই প্রতিকৃতিতে বৃদ্ধ দা-ভিঞ্চিকে দেখা যাচ্ছে একটি চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায়। আর তার ডান হাতটি ঝোলানো আছে সেই চাদরেরই ভারে। অনেকটা ভাঙা হাত যেমন ‘স্লিং’-এ ঝোলানো থাকে তেমনি করে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দা ভিঞ্চির বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীটি সোজাভাবে রয়েছে। মধ্যমাটি সামান্য বেঁকে এবং অনামিকা আর কনিষ্ঠ আঙুলটি সংকুচিত হয়ে রয়েছে। চিকিৎসকদ্বয় জানিয়েছেন, হাতের এই অবস্থাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘ক্ল হ্যান্ড’। যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বয়স্ক মানুষের স্ট্রোক হলে, আকছার পড়ে গিয়ে তারা এই ধরনের অসুখে আক্রান্ত হন। দা ভিঞ্চির সঙ্গেও সম্ভবত তেমনটাই হয়ে থাকবে। চিকিৎসকরা ওই প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, অত্যন্ত বেশি পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার কারণেই সম্ভবত শিল্পীর স্ট্রোক হয়ে থাকবে। যার বড় মূল্য চোকাতে হয় দা ভিঞ্চিকে। উল্লেখ্য, মোনা লিসা ছবিটি যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি তার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার কারণেই সম্পূর্ণ করতে পারেননি, সেই অনুমান আগেও করেছিলেন বিশারদরা। তবে তারা রোগ নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন।সাড় ছিল না হাতে, তাই অসমাপ্ত লিওনার্দোর ‘মোনা লিসা’।
খবর সারাবেলা / ২৪ আগস্ট ২০১৯ / টি আই