মহাসড়কে পার ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সূচি লন্ডভন্ড ট্রেনের
ট্রেনে আনন্দের ঈদযাত্রা দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগে ট্রেন সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে ছেড়েছে। রাতের ট্রেনগুলো ছয়-সাত ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে বলে আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে রেলের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
অগ্রিম টিকিটে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। প্রথম দিন থেকেই উত্তরের পথে কিছু ট্রেন দেরিতে চলেছে। গতকাল টাঙ্গাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ওই পথ ধরে চলা সব ট্রেনের সূচিই এলোমেলো হয়ে পড়ে। এরপরও ঘরে ফেরা মানুষের মধ্যে আনন্দের কমতি ছিল না। নগরবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে দলে দলে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন হাসিমুখে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ওঠার মুখে রেললাইন একটু উঁচু। সে জন্য ট্রেন চলার সময় লাইনে কিছুটা চাপ পড়ে। যে স্থানটিতে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে, সেখানে কয়েকটি স্লিপার ও জোড়া খারাপ ছিল। এ জন্যই বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আর বগি লাইনচ্যুত হওয়ার সময় খারাপ অংশের পাশাপাশি লাইনের ভালো অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগে যায়।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে ট্রেনের ৬৩৯টি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৭৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। অথচ রেললাইনের প্রতি ইঞ্চি যথাযথ আছে কি না, তা দেখার জন্য কর্মী রয়েছেন। ট্রেনের প্রতি যাত্রার আগে ইঞ্জিন-বগিরও ত্রুটি পরীক্ষা করারও নিয়ম আছে। কিন্তু এসব কাজ ঠিকমতো হয় না। এ জন্যই লাইন নির্মাণ, মেরামতে ও ইঞ্জিন-কোচের পেছনে বিপুল বিনিয়োগের পরও লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে।
রেলের পশ্চিমাঞ্চলের সব ট্রেন টাঙ্গাইল হয়ে চলাচল করে। এমনিতেই উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি স্টেশনে থামে। যাত্রী ওঠা-নামা করার কারণে বিলম্ব হয়। বেশির ভাগ ট্রেন চলে এক রেক (যে ট্রেন ঢাকা থেকে যায়, সেই ট্রেনই ফিরে আসে) দিয়ে। পশ্চিমাঞ্চলে মাত্র দুটি বাড়তি রেক আছে। যা দিয়ে সময়সূচি বিপর্যয় ঈদের আগে স্বাভাবিক করা যাবে না। রেলের পূর্বাঞ্চলের অনেক ট্রেনও দেড়-দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে বা গন্তব্যে পৌঁছেছে।
কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে ঘরমুখী মানুষের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। প্রায় সবার মুখেই বিরক্তির ছাপ, অপেক্ষার ক্লান্তি। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গেই ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যায়। দরজা দিয়ে সুবিধা করতে না পেরে অনেকে জানালা দিয়ে ট্রেনে ওঠে। সব বগিতেই ভিড় ছিল উপচে পড়া। ছাদেও ছিল না পা রাখার জায়গা।
রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান প্রথম আলোকে বলেন, টাঙ্গাইলে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তবে এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য সময়সূচি বিপর্যয় রোধ করা। সেই চেষ্টায় করছেন তাঁরা।
দেরিতে যাত্রা
রেলওয়ে সূত্র বলছে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনে ৭৩টি আন্তনগর ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮টি ট্রেন দেরিতে ঢাকা ছাড়ে। এর মধ্যে লালমনিরহাট স্পেশাল সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা ২৫ মিনিট দেরি হয়। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সাত ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। বাকি সব ট্রেনই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা করে দেরিতে ছাড়ে। ২৪টি ট্রেন ঢাকা থেকে সময়মতো ছেড়ে যায়। তবে এর অনেকগুলো পথে আটকা পড়ে কয়েক ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছায়।
দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে ছিলেন স্কুলশিক্ষক সাবিনা হক। তিনি বলেন, ‘ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। কিন্তু স্টেশনে এসে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল নয়টায়। ছোট দুই বাচ্চাকে নিয়ে ছয় ঘণ্টা ধরে বসে আছি। এখনো জানি না ট্রেন কখন আসবে। এলেও আসন পাব কি না, সে নিশ্চয়তাও নেই। বাড়ি কখন যাব, সে কথা তো সুদূর ভাবনা।’
সাধারণত রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনের দেরি হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করতে চায় না। গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিমাঞ্চলের কোন কোন ট্রেন কত সময় পর্যন্ত দেরি হতে পারে, এর একটা ধারণা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এতে দেখা যায়, সিল্কসিটি ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে (রাত নয়টায়) ঢাকা ছাড়বে। রাজশাহীর পদ্মা এক্সপ্রেস ছয় ঘণ্টা দেরিতে ভোর সোয়া পাঁচটায় ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার পথে চলাচলকারী চিত্রা এক্সপ্রেস চার ঘণ্টা, দিনাজপুরের দ্রুতযান পৌনে দুই ঘণ্টা, বেনাপোল এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ার কথা। তবে রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সন্ধ্যায় দেরিতে ছাড়ার যে সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে, তা-ও মানা সম্ভব হবে না। কোনো কোনো ট্রেন আট-নয় ঘণ্টাও দেরি হতে পারে।
সকাল ১০টায় কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের। কিন্তু ট্রেনটি দেড় ঘণ্টা দেরিতে বেলা সাড়ে ১১টায় ছাড়ে। রাত পৌনে ১০টার সময়ও ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে পারেনি বলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান যাত্রী মিজানুর হমান। তিনি বলেন, এত দেরির কারণ কী, সে সম্পর্কে যাত্রীদের কিছু জানাচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা লাগে।
বেলা ১১টার দিকে কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। ছাদে যাত্রা নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে ছাদে ওঠা যাত্রীদের হাত নেড়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় সূচি বিপর্যয়ের ব্যর্থতা স্বীকার করে বলেন, নিকট ভবিষ্যতে এ সমস্যার সমাধান হবে না। বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটি লাইন। আরেকটি সেতু না হলে ভোগান্তি থাকবেই।
এ সময় রেলমন্ত্রীকে যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে ভ্রমণের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটি উচিত নয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়। কারও ক্ষতি হলে মন্ত্রী হিসেবে সে দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।’
মহাসড়কে ও ঘাটে ভোগান্তি
ঘাটে আটকা পড়ায় নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে বাস আসেনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় কাউন্টারে বসে থাকতে হয়েছে। বাসে উঠতে পারলেও নিস্তার নেই। মহাসড়কে যানজটে থমকে ছিল যানবাহন। বৈরী আবহাওয়া ও তীব্র স্রোতের কারণে ঘাটে পৌঁছে ফেরির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। গতকাল শুক্রবার ঈদযাত্রায় ঘরমুখী যাত্রীদের এভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
আগামী রোববার ঈদের ছুটি শুরু। এর আগে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী যাত্রীর ভিড় ছিল। ঘরমুখী যাত্রীদের বড় অংশই গতকাল ঢাকা ছেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটের কারণে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা লাগে।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়ায় গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছিলেন চাকরিজীবী রিয়াজ মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, দুই শিশুসন্তান ও এক ভাতিজা। গতকাল সকাল আটটায় ঢাকার গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন তাঁরা। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের ফেরির টিকিট কাউন্টারের কাছে পৌঁছায় বাসটি।
রিয়াজ মাহমুদ বলেন, সাড়ে সাত ঘণ্টায় বাসটি ফেরির কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অথচ স্বাভাবিক সময়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়ায় পৌঁছাতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগে।
শুক্রবার সকাল নয়টার পর থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জ অংশে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন যাত্রী ও শ্রমিকেরা জানান, মহাসড়কের ভাটবাউর, মহাদেবপুর ও ফলসাটিয়া এলাকায় তিনটি যাত্রীবাহী বাস বিকল হয়ে পড়ে। এতে পুখুরিয়া থেকে উথলী মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টার পর বারবাড়িয়া থেকে টেপড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এসে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আটকে থাকতে হয়। এম এম পরিবহনের বাসের যাত্রী আনোয়ার হোসেন পরিবার নিয়ে ঈদ করতে রাজবাড়ী সদরের সোনাকান্দর গ্রামে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে ফেরির অপেক্ষায় আছেন।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় অনেকটা হিমশিম অবস্থা।
ঘাটে আটকে থাকায় গাবতলীতে বাস কাউন্টারে পৌঁছায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে। সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস ঢাকা কাউন্টারের ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সকালের নির্ধারিত বাসগুলোর সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টার বাস দুপুর ১২টা, ৭টার বাস দুপুর সাড়ে ১২টা আর সকাল ৮টার বাস বেলা ১টায় ঢাকা ছেড়েছে।
সরকারি চাকরিজীবী আওলাদ হোসেন পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে গাবতলী এসেছেন সকাল আটটায়। দুপুর ১২টায় তাঁর বাস কাউন্টারে আসেনি। ঈগল পরিবহনের কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে, একটার পরে বাস ছাড়বে। আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আগে জানালে পরিবার নিয়ে বাসা থেকে দেরি করে বের হতাম।’
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কের কাজ চলায় গুলিস্তান থেকে মাওয়া পর্যন্ত পুরো পথেই থেমে থেমে যানজট ছিল। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার ভোর পাঁচটায় ধানমন্ডি থেকে বের হন শরীয়তপুর যাবেন বলে। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে পৌঁছান বেলা সোয়া ১১টায়। স্বাভাবিক সময়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগলেও গতকাল লেগেছে ছয় ঘণ্টা।
শিমুলিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশমুখ শিমুলিয়া ঘাটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল চার শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন।
মহাসড়কে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা
বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর সিরাজগঞ্জের দিকে গাড়ি আগাতে না পারায় টাঙ্গাইল অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত পৌঁছাতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা লাগলেও যানজটের কারণে গতকাল ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশের মহাসড়কেও যানবাহন চলেছে থেমে থেমে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সেতু দিয়ে ৩০ হাজার ৮৫৯টি যানবাহন পারাপার হয়, যা স্বাভাবিকের অবস্থার চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। সিরাজগঞ্জের দিক থেকে যানজট সেতু অতিক্রম করে পূর্ব প্রান্তের টোল প্লাজা পর্যন্ত চলে আসায় সকালে দুবার এবং দুপুরে একবার টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার যানজট। টাঙ্গাইল শহর বাইপাসে যানজটে আটকে থাকা বাসের চালক শরিফুল ইসলাম জানান, সকাল সাতটায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে আট ঘণ্টায় টাঙ্গাইল পর্যন্ত এসেছেন। তারপর আর আগাতে পারছেন না।
যানজটে আটকে পড়া যাত্রীদের গরমের কারণে বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে গাছতলায় আশ্রয় নিতে দেখা যায়। গাইবান্ধাগামী যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতি ঈদে এভাবে যানজটে দুর্ভোগের কারণে ঈদের আনন্দ ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেন না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় চার লেনের এ মহাসড়ক বিভিন্ন স্থানে এক লেন বা দুই লেন হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়ক খানাখন্দে ভরা। বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
ঢাকা-গৌরীপুর-হোমনা সড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে সড়ক মেরামত না করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান বলেন, কাঁচপুর, মেঘনা সেতুর পশ্চিম ঢালের টিকিট কাউন্টার এবং দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারের আধা কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে অতিরিক্ত চার ঘণ্টা সময় লাগছে।
খবর সারাবেলা / ০৯ আগস্ট ২০১৯ / টি আই