বৃষ্টিতে ক্রেতা কম, আতঙ্কে বিক্রেতারা

পবিত্র ঈদুল আজহার ৩ দিন বাকি। কিন্তু রাজধানীতে এখনও জমে উঠেনি কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার ছিল টানা বৃষ্টি। এ কারণে ওইদিন ক্রেতা উপস্থিতি ছিল আরও কম।
ফলে বিক্রেতারা কিছুটা আতঙ্কে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের চেয়ে পশুর দাম কিছুটা বেশি। এদিকে গরুর হাট ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন রাস্তায় মানুষের ভোগান্তি চরমে। বেশ কিছু রাস্তা ইতিমধ্যে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গাবতলী, আফতাবনগর, মিটফোর্ড এলাকার পশুর হাট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, এবার হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠবে। এর দুটি কারণ- প্রথমত, দেশে প্রচুর গরু উৎপাদন হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, দেশের বিশাল এলাকায় এবার বন্যা হয়েছে। সে কারণে ওইসব এলাকার মানুষ খাদ্য ও অবকাঠামোগত সমস্যায় গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

এতে দামও কমবে। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে গাবতলীতে ৫০ মণ ওজনের একটি গরু নিয়ে এসেছেন সঞ্জু ইসলাম। গরুর নাম দেয়া হয়েছে বীর বাহাদুর। ২৫ লাখ টাকা দাম চান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ক্রেতা এসে শুধু ঘুরে যাচ্ছেন।

এ বক্তব্য অধিকাংশ বিক্রেতার। তারা বলছেন, মানুষ দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। আজ (শুক্রবার) কেনাকাটা শুরু হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী ঢাকায় ভারি বৃষ্টি ছিল। এ কারণে ক্রেতা ছিল একেবারে কম।

আর বৃষ্টির কারণে রাস্তায় দাঁড়াতেও খুবই সমস্যায় পড়েছেন বিক্রেতারা। গাবতলীতে গরু কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন জানান, এবার গরুর দাম বেশি। গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকায় কেনা যেত, এবার তার দাম ৬০ হাজার টাকা।

গরুর দাম : বিভিন্ন দামের গরু রয়েছে গাবতলী হাটে। ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ১ লাখ, দেড় লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ, চার লাখ এবং পাঁচ লাখ টাকার গরুর সংখ্যা বেশি।

এ বিষয়ে গাবতলী হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সানোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘গাবতলী হাটে এখন প্রতি মুহূর্তে ট্রাকে পশু আসছে। এখনও কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি শুরু হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে এখন প্রচুর গরু পালন হচ্ছে। এ কারণে দেশি গরুতে হাট ভরে যায়। এর ওপর এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হয়েছে, ওইসব এলাকার পশুগুলো আসতে শুরু করেছে। এ কারণে হাটে পশুর সংখ্যা বেশি হবে বলে আশা করছি। আর পশুর সংখ্যা বেশি হলে দামও সহনীয় থাকবে।’

মহিষ : ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ৭-৮ লাখ টাকা দামের মহিষ রয়েছে গাবতলী হাটে। তবে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে মহিষের সংখ্যা বেশি। এ হাটের মহিষগুলো স্থায়ী খাটালে রাখা। সারা বছরই এখানে মহিষ পাওয়া যায়। কোরবানি উপলক্ষে মহিষের সংখ্যা কিছুটা বাড়ে।

খাসি : হাটে ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের খাসির সংখ্যা বেশি। তবে ৩০-৩৫ এবং ৪০ হাজার টাকাও কিছু খাসির দাম চাওয়া হচ্ছে। শুক্রবারে আরও বেশি দামের খাসি হাটে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

উট : গাবতলী হাটে ঈদ উপলক্ষে উট এসেছে ৩টি। এ তিনটি উঠের দাম হাঁকানো হয়েছে ১৪ লাখ, ১৬ লাখ এবং ১৭ লাখ। উটের মালিক মো. আজাদ রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘এ উটগুলো ভারত থেকে আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে দামাদামি হয়েছে। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় উটগুলো বিক্রি করা হয়নি।’

দুম্বা : গাবতলী গবাদি পশুর হাটে বেশ কিছু দুম্বাও উঠেছে। এসব দুম্বার দাম হাঁকা হয়েছে ২ লাখ, ৩ লাখ, ৪ লাখ এবং সাড়ে ৫ লাখ টাকা। আমদানিকারকের দাবি, ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ টাকায় একটি দুম্বা বিক্রি করেছেন।

ভোগান্তি : মিটফোর্ড হাসপাতালের চারপাশ ও ধোলাইখালের প্রধান সড়কের দু’পাশ দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন ইজারাদাররা। এতে রাস্তাগুলোতে চলাচলরত যানবাহন ও হাসপাতালে আগত রোগী, ডাক্তাররা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

নয়াবাজার মোড় থেকে মিটফোর্ড হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকার দেড় কিলোমিটার প্রধান সড়কের দু’পাশজুড়ে গরুর হাট বসানো হয়েছে। এতে যানজটে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে মাওয়াগামী যানবাহনগুলো আটকা পড়ে মন্থর গতিতে চলছে।

আধা কিলোমিটার সড়ক পার হতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। বাবুবাজার ব্রিজের নিচ দিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রবেশমুখ পর্যন্ত রাস্তার দুই পার্শ্বেও একইভাবে গরুর হাট বসায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী, ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মচারীরা। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে।

এদিকে রায়সাহেব বাজার থেকে ধোলাইখাল, গেণ্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ সড়কের দুই পার্শ্বে হাট বসায় চরম বিপাকে পড়েছেন মানুষ। এছাড়া বাজারগুলোতে উচ্চ শব্দের মাইক লাগিয়ে দিন-রাত ক্রেতাদের আহ্বান করা হচ্ছে। ইজারাদারদের এমন আচরণে অতিষ্ঠ মানুষ।

অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজের গোড়া থেকে মিটফোর্ড পর্যন্ত রাস্তায় বড় বড় গর্তের মধ্যে পড়ে যানবাহন উল্টে পড়ছে। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো থাকায় রাস্তায় পানি জমে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। রাস্তার পার্শ্বে গরুর হাট রাস্তার মধ্যখানে গর্ত থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন চলাচলরত যাত্রীরা।

নয়াবাজার পুলিশ বক্সের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. ইসমাইল যুগান্তরকে বলেন, রাস্তা বন্ধ করে গরুর হাট বসানো হয়েছে। এ কারণে যানজট লেগেই আছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমি এক কিলোমিটার পথ হেঁটে অফিসে এসেছি।

পরে আমার গাড়ি ২ ঘণ্টায় ওই এক কিলোমিটার পথ এসেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাস্তার ওপর হাট বসাতে পারবে না বলে সব ইজারাদারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে রাস্তার ওপর হাট বসেছে, ম্যাজিস্ট্রেট ওইগুলো উচ্ছেদ করবেন বলে জানান তিনি।

খবর সারাবেলা/০৮ আগস্ট ২০১৯/টিআই