ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে কাঠবাদাম খান

পুষ্টিবিদদের মতে, কাঠবাদাম হলো একটি ফ্যান্টাসটিক সুপার ফুড, যেখানে ১০টিরও বেশি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে। এসব পুষ্টি হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। কাঠবাদামে থাকা নানান খনিজ উপাদান ও ভিটামিন শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। স্বাদের দিক থেকেও কাঠবাদাম স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়ার জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটি খাবার।কাঠবাদামে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড অয়েল, ফলিক অ্যাসিড জিঙ্ক, ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এছাড়া কাঠ বাদামে যেসকল পুষ্টি উপাদান থাকে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে রয়েছে– এনার্জি- ৫৭৮ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট- ২০গ্রাম, আঁশ- ১২ গ্রাম,ফ্যাট- ৫১ গ্রাম, প্রোটিন- ২২ গ্রাম, থায়ামিন- ০.২৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন- ৪ মিলিগ্রাম, রাইবোফ্লেভিন- ০.৮ মিলিগ্রাম, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড- ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই- ২৬.২২ মিলিগ্রাম,ভিটামিন বি৬- ০.১৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২৪৮ মিলিগ্রাম, আয়রন- ৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ২৭৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ৭২৮ মিলিগ্রাম।

পুষ্টিবিদরাও কাঠবাদাম খেতে উৎসাহ দেন। কারণ এই বাদামটি খাদ্যগুণে ভরপুর। ভিটামিন থেকে শুরু করে ফ্যাট, ফাইবার, নানা রকম মিনারেল— সব আছে এতে। জেনে নিন প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে কাঠবাদাম। কাঠবাদামে থাকা প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ও ইনসুলিনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে নিয়ম করে কাঠ বাদাম খাওয়া অনেক সময় ডায়াবেটিসের ওষুধ খাবার থেকেও বেশী উপকার দেয়।

ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমন্ডে উপস্থিত মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট খিদে কমায় ও পেট ভরিয়ে রাখে।হৃদয় ভালো রাখে আমন্ড। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল (লো ডেন্সিটি লিপোপ্রোটিন) নিয়ন্ত্রণ করে।ভেজানো আমন্ডে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস্ শরীরের ফোলাভাব কমায় ও অকালপক্কতা নিয়ন্ত্রণ করে।ক্যানসার রোধে সাহায্য করে ভোজানো আমন্ডে উপস্থিত ভিটামিন বি১৭।

কাঠবাদামে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরে টিউমার হতে দেয় না।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো আমন্ড খেলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।সন্তানসম্ভবাদের নিয়ম করে ভেজানো আমন্ড বা কাঠবাদাম খেতে পরামর্শ দেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞরা। এতে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড জন্মের সময় শিশুর খুঁত দূর করে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রয়োজন মতো বাড়তে পারে রোজ কাঠবাদাম খেলে। এতে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক। কিন্তু তা হল মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা স্বাস্থ্যের উপকার করে। তাই এর থেকে শরীরের জন্য উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রাই বাড়ে।

কাঠবাদামে ভিটামিন ই-র পরিমাণও অনেক। ফলে সেই উপাদানের মাত্রাও বাড়ে শরীরে। তার প্রভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, রক্ত চলাচল, চোখের স্বাস্থ্য— সবই ভাল থাকে। পাশাপাশি, ত্বকের যত্নও নেয় ভিটামিন ই। কয়েক দিনেই চেহারার জেল্লা ফেরায়।

কাঠবাদামে ফাইবার আর প্রোটিনের মাত্রাও কম নয়। তাই কয়েকটি বাদাম খেলে অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। ফলে যাদের ওজন ঝরানোর ভাবনা রয়েছে, তাদের জন্য এই বাদাম বেশ উপকারি। কম পরিমাণ খাবার খেয়েও বেশি ক্ষণ থাকা যায় এ ক্ষেত্রে।

মন ভালো রাখে কাঠবাদাম। ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি পদার্থ শরীরে যায় কাঠবাদামের মাধ্যমে। তা থেকে তৈরি হয় সেরোটোনিন। এই হরমোনই মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে অবসাদ বা উদ্বেগের মতো সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

সহজে হজম হয়। দেখা গিয়েছে, কাঁচা কাঠবাদামের থেকে ভিজিয়ে রাখা আমন্ড অনেক সহজে হজম হয়। খুব সহজেই পেটে গিয়ে ভেঙে যায় এগুলো। হজমের সহায়ক উৎসচেকগুলোও কাজ করতে পারে সহজে।পুষ্টি গুণ বেশি। আমন্ডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কর্মক্ষমতাও বেড়ে যায় এটি ভিজিয়ে রাখলে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমন্ড ভিজিয়ে রাখলে এ থেকে লাইপেস নামক একটি উপাদান নির্গত হয়। সেটি মেটাবলিজম বা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে মেদ বৃদ্ধি পায় না।

ফাইটিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমায়। কাঠবাদাম বা আমন্ডে ফাইটিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে। শরীর আমন্ডের জিঙ্ক এবং আয়রন হজম করতে গেলে এই ফাইটিক অ্যাসিড বাধার সৃষ্টি করে। ফলে এই দুই পদার্থের পুরোপুরি ব্যবহার হয় না। আমন্ড ভিজিয়ে রাখলে তা থেকে ফাইটিক অ্যাসিড বেরিয়ে যায়। ফলে তার পুষ্টিগুণ বাড়ে।

খবর সারাবেলা / ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ / এমএম