কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ ফেল হলে করণীয়
কম্পিউটারে ব্যবহূত হার্ডওয়্যারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হার্ড ড্রাইভ। অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হার্ডড্রাইভেই থাকে। হার্ড ড্রাইভ ফেল বা হার্ড ড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়াটা একটি বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা। হার্ড ড্রাইভের ডাটা রিড করার ক্ষমতা হারিয়ে গেলে পুরো একটি কম্পিউটার ব্যবহারের অনুপযোক্ত হয়ে যেতে পারে। কোনো সময় পুরো হার্ড ড্রাইভ নষ্ট হয়ে গেলে আপনি পিসি বুটআপই করতে পারবেন না এবং অনেক সময় দেখা যায় যে অপারেটিং সিস্টেম লোড হলেও হার্ড ড্রাইভের ড্রাইভগুলোকে প্রবেশ করা যায় না। স্টোর করা ডাটাগুলো ড্যামেজ হয়ে থাকে। হার্ড ড্রাইভ ফেইল বা নস্ট হয়ে গেলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপনার সংরক্ষণ করা ডাটাগুলো।
হার্ড ড্রাইভের কমন ফেলসমূহ
হার্ড ড্রাইভের সব থেকে কমন একটি ফেল হচ্ছে ‘হেড ক্রাশ’ । হেড ক্রাশে একটি হার্ড ড্রাইভের ড্রাইভ হেড ডিস্কের প্ল্যাটারের সাথে লেগে যায়। মানে প্ল্যাটারের সাথে ড্রাইভ হেডের সংর্ঘষ হয়। আর সেটা হলে ডিক্সের ম্যাগনেটিভ মিডিয়াগুলো ড্রাইভ হেডের কারণে প্ল্যাটার থেকে মুছে যায় এবং এ কারণে একটি হার্ড ড্রাইভের ড্রাইভ হেড নষ্ট হয়ে যায়। আর ড্রাইভ হেড নষ্ট হয়ে গেলে বা এই ‘হেড ক্রাশ’ ফেইলের কোনো সহজ রিকোভারি সিস্টেম নেই। হেড ক্রাশযুক্ত হার্ড ড্রাইভ থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া ডাটা উদ্ধার করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার।
আরেকটি কমন ফেল হচ্ছে ‘ব্যাড সেক্টর’। একটি হার্ড ড্রাইভের ব্যাড সেক্টর এরিয়াতে কোনো ডাটা রাখা যায় না এবং ব্যাড সেক্টর হওয়ার আগে সেখানে কোনো ডাটা থাকলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন ২৫০ গিগাবাইট একটি হার্ড ড্রাইভ চালাতে চালাতে আপনি এক সময় হিসেব করে দেখলেন যে টোটাল ব্যবহারযোগ্য জায়গার পরিমাণ ২২০ গিগাবাইট। তাহলে বুঝবেন যে বাকি স্টোরেজগুলো ব্যাড সেক্টরের মধ্যে চলে গেছে।
এ সমস্যাটি হার্ড ড্রাইভের ম্যাগনেটিক মিডিয়ার জন্য হয়ে থাকে। যখন একটি ডিক্সের ম্যাগনেটিক মিডিয়া থেকে ডাটাগুলো ডিক্সের নির্দিষ্ট সেক্টরে কম্পিউটার রিড/রাইট করতে পারে না তখন ব্যাড সেক্টরের উৎপত্তি ঘটে। হার্ড ড্রাইভ ম্যানুফেকচার করার সময় থেকেই সেখানে ব্যাড সেক্টরের উপস্থিতি থাকে। তাই একটি ২৫০ জিবি বা ৫০০ জিবি বা যেকোনো সাইজের হার্ড ড্রাইভের সম্পূর্ণ স্টোরেজ সাইজগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি না।
যেমন ২৫০ জিবি হার্ড ড্রাইভ পিসিতে লাগানোর পর আপনি হয়তো দেখবেন ২৪৫ বা ২৪৬ জিবি স্টোরেজ দেখাচ্ছে, ৫০০ জিবি হার্ড ড্রাইভ পিসিতে লাগানোর পর আপনি হয়তো দেখবেন ৪৮৮ জিবি বা ৪৯০ জিবি স্টোরেজ দেখাচ্ছে ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে হার্ড ড্রাইভ ব্যবহারের জন্য এই ব্যাড সেক্টরের পরিমাণ খুবই নগণ্য হারে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যেমন এক হার্ড ড্রাইভ ১৪/১৫ বছর ব্যবহার করার পর আপনি দেখলেন যে ২৫০ জিবির স্টোরেজের স্থানে আপনি মাত্র ৮০/৭০ জিবি স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারছেন।
যেসব হার্ড ড্রাইভের প্ল্যাটারগুলো ‘গ্লাস’ দিয়ে তৈরি করা হয় সেগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুতিক তাপের কারণে এই প্ল্যাটারগুলো ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর প্ল্যাটার ভেঙে গেলে হার্ড ড্রাইভের ম্যাগনেটিক ডাটা রিড রাইট কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে যায় এবং ফলাফল হিসেবে পুরো হার্ড ড্রাইভটি নষ্ট হয়ে যায়। উন্নত বিশ্বে কম্পিউটারগুলো সাধারণত এসিযুক্ত রুমে থাকে এবং সেসব দেশগুলো ঠান্ডাপ্রধান দেশ হওয়ায় গ্লাস দিয়ে প্ল্যাটার তৈরি করা হতো। তবে বর্তমানে হার্ড ড্রাইভ ম্যানুফেকচাররা অন্য মেটারিয়াল দিয়ে প্ল্যাটার তৈরি করছে।
অন্যদিকে, আপনার হার্ড ড্রাইভের লজিক বোর্ডে যদি কোনো ইলেকট্রিক্যাল সমস্যা ঘটে তাহলে ড্রাইভের নির্দিষ্ট কিংবা সব ডাটাগুলো ‘unreadable’ বা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। কম্পিউটার সিস্টেম এবং হার্ড ড্রাইভের মধ্যে লজিক বোর্ড সঠিক ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে না পারলে এই সমস্যাটি ঘটে থাকে।
হার্ড ড্রাইভ ফেল হলে করণীয়
সবসময় মনে রাখতে হবে অনান্য কম্পিউটার যন্ত্রপাতির মতো হার্ড ড্রাইভও একটি ইলেকট্রিক্যাল জিনিস। আর একটি ইলেকট্রিক্যাল জিনিস ব্যবহার করুন বা না করুন যেকোনো সময়ই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হার্ড ড্রাইভ ফেইল প্রতিরোধের ১০০% কোনো সঠিক সমাধান নেই। ইলেকট্রিক্যাল জিনিস নষ্ট হবেই এটা গ্যারান্টি। আমরা হার্ড ড্রাইভ ফেইল প্রতিরোধ করতে না পারলেও ডাটাগুলো যথা স্থানে ব্যাকআপ রেখে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি।
হার্ড ড্রাইভ নষ্ট হলে বা ফেইল হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর সংরক্ষিত ডাটাগুলো। হার্ড ড্রাইভে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কোনো ডাটা থাকলে সেটা হার্ড ড্রাইভ নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। আর একটি নষ্ট হার্ড ড্রাইভ থেকে ডাটা উদ্ধার করা বেশ খরচ সাপেক্ষ এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার অনেক সময় নষ্ট হার্ড ড্রাইভ থেকে কোনো ভাবেই শতভাগ সঠিক ডাটা উদ্ধার করা যায় না।
এজন্য আমাদের করণীয় হচ্ছে—গুরুত্বপূর্ণ ডাটাগুলোর কয়েকটি ব্যাকআপ করে রাখা। আর সম্ভব হলে আপনি ক্লাউড সিস্টেমে ডাটাগুলো ব্যাকআপ করে রাখুন, এতে হার্ড ড্রাইভ নষ্ট হয়ে গেলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড থেকে পরবর্তীকালে ডাটাগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
আরেকটি প্রতিকার হচ্ছে পিসি আপগ্রেড করার সময় বা নতুন পিসি কেনার সময় উন্নত ব্র্যান্ডের উন্নত কোয়ালিটির হার্ড ড্রাইভ কিনুন। টেকনোলজি প্রতিনিয়তই আপগ্রেড হচ্ছে এবং আপগ্রেডেড জিনিসগুলো পুরোনো জিনিসের থেকে দামে একটু বেশিই হবে। সম্ভব হলে সরাসরি সলিড স্টেট ড্রাইভে পিসিকে আপগ্রেড করে ফেলুন।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে আপনি পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করুন। একটি সাধারণ হার্ড ড্রাইভের থেকে পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভের ফেল হওয়ার চান্স অনেক কম থাকে। পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভগুলোতে উন্নত টেকনোলজি দেওয়া থাকে বিধায় এগুলো তুলনামূলকভাবে কম নষ্ট হয়ে থাকে। এছাড়াও পেনড্রাইভের মতো একটি পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভে শুধুমাত্র ডাটা স্টোর করার সময় ব্যবহূত হয় বিধায় বা তুলনামূলক কম ব্যবহার করা হয় বলে এগুলো বেশিদিন টেকসই হয়ে থাকে।
ইলেকট্রিক্যাল ফেলের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই, তাই এগুলো প্রতিকারে আমরা কিছু না করতে পারলেও হার্ড ড্রাইভ সুস্থ রাখার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হার্ড ড্রাইভকে অতিরিক্ত হিট হতে না দেওয়া। ব্যবহার করার সময় হার্ড ড্রাইভ যাতে গরম না হয় এর জন্য উন্নত মানের কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করুন এবং সম্ভব হলে এসিযুক্ত রূমে কম্পিউটার ব্যবহার করুন।
ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হলে হার্ড ড্রাইভ ব্যবহারে একটু সর্তক হোন; একই সঙ্গে একাধিক কাজ করবেন না (যেমন বড় ফাইল কপি দিলেন আবার ব্যাকগ্রাউন্ডে অনান্য কাজ চালিয়ে গেলেন) এবং সম্ভব হলে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হলে নতুন হার্ড ড্রাইভ কিনে নিন।
খবর সারাবেলা / ২৪ আগস্ট ২০১৯ / টি আই