আশ্বিনের শেষে হেমন্তের হাওয়া

আশ্বিনের অন্তিম নিঃশ্বাসের শ্বদ শোনা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। বিদায়ী শরতের সাদা মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে আসছে হেমন্ত। কান পাতলেই শোনা যায় ঝরা পাতার গান। আবার ডালা ভরবে নতুন ফসলে। পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের কবিতায়, ‘আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান,/ সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি কোটার গান।’

তাই হেমন্তের অন্য নাম নবান্নের ঋতু।

হেমন্তের পরিণতি শীতের আগামনী গানে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের দরজা খুলে দিয়ে শরতের বিদায়ের পালা। হেমন্তকাল আসছে ক’দিন বাদেই। ঘরে ঘরে নবান্নের আনন্দের আলো ছড়াতে ডাক পাঠাবে হেমন্ত। হয়তো বলবে :

‘শূন্য এখন ফুলের বাগান

দোয়েল কোয়েল গাহে না গান,

কাশ ঝরে যায় নদীর তীরে।

যাক অবসাদ বিষাদ কালো

দীপালিকায় জ্বালাও আলো

জ্বালাও আলো, আপন আলো,

শুনাও আলোর জয়বানীরে।’

আর ক’দিন পরই বইতে শুরু করবে হেমন্তের হাওয়া, তাই পোশাকের ক্ষেত্রে সিল্ক কিংবা জর্জেট পরার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আরামদায়ক হবে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও। জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়ের লং কামিজ, টপস, স্কার্ট, গাউন ধাঁচের পোশাক এখনকার উৎসবের জন্য ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। জিন্স, টি-শার্টের সঙ্গে নেট জ্যাকেট, টপসের সঙ্গে কটি, স্কার্ফ কিংবা সুপার ড্রেস বেছে নিতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাকে। পার্টির ধরনের সঙ্গে মানানসই হলে এ ধরনের পোশাক পরতে পারেন পার্টিতেও। দৈনন্দিন অফিসে শাড়ি পরতে চাইলে এখন অনায়াসে বেছে নিতে পারেন তসর, অ্যান্ডি, তাঁত কিংবা কটন শাড়ি। রাতের দাওয়াতে সিল্ক, কৃত্রিম মসলিন বা কাতান শাড়ি এই আবহাওয়ায় বেশ মানিয়ে যাবে। স্লিভলেস কিংবা হাফস্লিভ এখন চলে গেলেও আর ক’দিন পর থেকেই ফুলস্লিভে পাওয়া যাবে আরাম।

শরতে নীল-সাদা যদি একটু বেশিই পরা হয়ে থাকে তাহলে লাল, সবুজ, বেগুনি, মেরুন, কমলার মতো উজ্জ্বল কিংবা গাঢ় রংগুলো এখন নিশ্চিন্তে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন। যেহেতু শরৎ এখনও শেষ হয়নি তাই চাইলে শেষ শরতে এসে নীল, সাদা, আকাশির নীলাম্বরী সাজে সাজাতে পারেন নিজেকে।

হেমন্ত শুরু না হলেও এখন থেকেই ত্বক একটু টানতে শুরু করেছে অনেকেরই। তাই এখন তৈলাক্ত এবং শিমারি বেজ মেকআপ করা যেতে পারে বলে মনে করেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা রীতা। তিনি বলেন, ‘এখন ত্বকের স্বাভাবিক রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ক্রিম বেজড শিমার ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকে যদি কোনো দাগ ছোপ না থাকে, তাহলে শুধু ক্রিমের মতো করে হালকা শিমার মুখে বুলিয়ে নিলেও চলে। দাগ থাকলে অবশ্যই দাগ ঢাকতে কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। জমকালো দাওয়াতে ফাউন্ডেশন, প্যানস্টিক, ফেসপাউডার, ব্লাশন ব্যবহার করে ভারি বেইজ মেকআপ করতে পারেন।’ হালকা গোলাপি, পিচ, বাদামি, সোনালি আইশ্যাডো এখনকার সাজে ভালো লাগবে। কাজল দিয়ে চোখের বেশিদূর পর্যন্ত টানার চল এখন একটু কমে এসেছে। পাপড়ি ভারি দেখানোর চল চলছে। তাই চোখের ওপরের ও নিচের পাপড়িতে ঘন করে মাশকারা লাগিয়ে নিন। মোটা ও কালো ভ্রু এখনকার স্টাইল। এতে চোখজোড়া জমকালো হয়ে ওঠে।

এছাড়া ধূসর, সাদা বা রুপালি রঙের আইলাইনার হালকা মিশিয়ে চোখের নিচে লাগাতে পারেন। সব ধরনের মেকআপের সঙ্গেই চোখের সাজ গাঢ় হলে লিপস্টিকের রং হবে হালকা। আর চোখের সাজ হালকা হলে লিপস্টিক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে বিভিন্ন শকিং বা গাঢ় রং।এখনকার আবহাওয়ায় লাল, কমলা, হট পিংক, ম্যাজেন্টা, মেরুন রাখতে পারেন এই তালিকায়।

হেয়ার সেটিং নির্ভর করে চুলের লেন্থ, ভলিউম এবং মুখের গঠনের ওপর। পাশ্চাত্যের পোশাকের সঙ্গে চুল খুলে কিংবা সামনের দিকে ব্যাককম্ব করে একটু ফুলিয়ে দিতে পারেন। বড় বা মাঝারি চুল ছেড়ে রাখলে ভালো লাগবে। শাড়ির সঙ্গে খোলা চুলে গুঁজে দিতে পারেন দোলনচাঁপা, বেলি, কাঠগোলাপসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। চুল বাঁধতে চাইলে খুব সহজেই বেঁধে নেয়া যাবে হাফনট স্টাইলগুলো। অর্ধেক চুলে হাফনট করে তাতে শক্ত করে আটকে দিন ড্রেসের রঙের সঙ্গে মানানসই পাথর বসানো পাঞ্চ ক্লিপ। টপস, স্কার্ট বা যে কোনো ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে এই হেয়ার স্টাইলটি বেশ মানাবে। শাড়ির সঙ্গে সাধারণ হাতখোঁপা করে তাতে ব্যবহার করতে পারেন রুপার তৈরি কাঁটা। এটি চুলের আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলে।

স্বল্প উজ্জ্বল, ম্যাট ধরনের অক্সিডাইজ, সাধারণ রুপার গহনা হিসেবে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। জিন্স-ফতুয়ার সঙ্গে ধাতু, মাটি, কড়ি এমনকি কাচের গহনাও ভালো লাগে। এ ধরনের ছোট গহনা পরে যেতে পারেন যে কোনো অনুষ্ঠানে। সে ক্ষেত্রে পোশাকটা একটু জমকালো হওয়া উচিত। জরিপাড়, জামদানি শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন সোনারঙা ছোট গহনা। পার্টি সাজের সঙ্গে বড় বা ঝোলা আকৃতির ব্যাগ মানানসই নয়। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন ক্লাচ বা বটুয়া। হিল কিংবা স্লিপার যাই পরুন, কাদাপানি থাকলে পা-ঢাকা জুতা পরলে পা ভালো থাকবে।

খবর সারাবেলা/ ০৯ / অক্টোবর ২০১৯ / এমএম