দেশে কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা কমছে

দেশে হুহু করে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চিকিৎসা নিতে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তির চেয়ে বাসায় চিকিৎসার প্রতি গুরুত্বারোপ করছে বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে বিভিন্ন কোভিড হাসপাতাল বন্ধ করার কথা ভাবছে সরকার।

এর আগে সম্প্রতি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। সেসময় এক চিঠিতে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ূয়া লিখেন, ‘৪ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের টেলিফোনে করা মৌখিক নির্দেশে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১৫ আগস্ট থেকে হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে আইসোলেশন ওয়ার্ডের কার্যক্রম চালু থাকবে।

এদিকে দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমতির দিকে। আবার সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও কম। এমনকি ৬২ শতাংশ শয্যা খালি রয়েছে বলে জানা যায়। এই বাস্তবতায় দেশের কিছু কিছু করোনা হাসপাতাল বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তবে সরেজমিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২০০ জনের বেশী গুরুতর আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। কোষাধ্যক্ষ জানান, আইসোলেশন বিভাগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনই বন্ধ হচ্ছে না কোভিড ইউনিট।

এদিকে অধিকাংশ শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকায় সরকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা কমানোর কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি বন্ধের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানে ২০০ শয্যার কোভিড ইউনিটে রোগী ভর্তি আছে মাত্র ৯৪ জন। ধাপে ধাপে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা আরও কমানো হবে। এর মূল লক্ষ্য কোভিড রোগীর বাইরে অন্য রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করা।

করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হলে ওই হাসপাতালে অন্য রোগীদের সংকুলান করা সম্ভব হয় না। এতে করে সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। চিকিৎসার অভাবে অনেকে মারাও যান। আবার করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যাও ফাঁকা পড়ে থাকে। এসব বিষয় চিন্তা করেই সরকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চাচ্ছে।

তবে আইসোলেশন বিভাগ রোগীতে পরিপূর্ণ। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, এই মুহূর্তে করোনা ইউনিট বন্ধ করা অনুচিত। তবে পর্যায়ক্রমে দীর্ঘ সময় নিয়ে করোনা হাসপাতাল বন্ধ করা যেতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভিড চিকিৎসার শয্যা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ফাঁকা পড়ে থাকে। কারণ আক্রান্তদের অধিকাংশের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তারা টেলিমেডিসিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

এ অবস্থায় কোভিড শয্যা কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য যেসব হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড- এ দুই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেসব হাসপাতালে কোভিড ইউনিট তুলে নেওয়া হবে। কারণ কোভিড রোগী ভর্তি থাকার কারণে ওইসব হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা আসতে চায় না। এতে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে প্রথম শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিট তুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের আরও কয়েকটি হাসপাতালের কোভিড ইউনিট তুলে দেওয়া হবে। যাতে অন্য রোগীরা সেবা পায়। একই সঙ্গে কিছু হাসপাতালে মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত করোনা চিকিৎসা চালু রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

একদিকে রোগী বাড়ছে, অন্যদিকে হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যা কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, এখনই কোভিড ডেডিকেটেড শয্যা কমানো যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ রোগীর সংখ্যা কম বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

এখনও প্রতি পাঁচজনে একজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। শুরু থেকেও এমনটি ছিল। তবে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় রোগী কমছে। কিন্তু সংক্রমণের হার কমেনি। বরং তা আগের মতোই আছে। এ অবস্থায় শয্যা কমিয়ে দিলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। সুতরাং শয্যা কমানোর আগে আরও চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ঈদের পর সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি শঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় তা অনুধাবন করা যাচ্ছে না। প্রতি পাঁচজনে একজন আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে। আগেও এটি ছিল। মানুষ যেভাবে চলাফেরা করছে তাতে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও বাড়তে পারে। সুতরাং এখনই করোনা ডেডিকেটেড শয্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হবে না।

আরও কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এতে করে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বন্ধ করার পর প্রয়োজন হলে তখন এগুলো চালু করা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। সুতরাং সংশ্লিষ্টদের এটি বিবেচনায় নিতে হবে।

করোনা ডেডিকেটেড শয্যা কমানোর সিদ্ধান্ত বিবেচনাপ্রসূত নয় মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতি পাঁচজনে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছেন। শুরু থেকেই এমনটি ছিল। তাহলে সংক্রমণ কীভাবে কমার কথা বলা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কম শনাক্ত হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে।

সুতরাং সংক্রমণ কমছে- এটি বলার সময় এখনও আসেনি। ঈদে যেভাবে মানুষ যাতায়াত করেছে এবং এখনও যেভাবে চলাফেরা করছে তাতে মনে হয়, করোনা বলতে কিছু নেই। এটি চিন্তার বিষয়। এভাবে চললে সংক্রমণ বাড়বে। সুতরাং এখনই শয্যা কমানোর সিদ্ধান্ত বিবেচনাপ্রসূত নয়। আরও কিছুদিন দেখে পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

খবর সারাবেলা / ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ / এমএম