বেকার হওয়ার শঙ্কায় প্রবাসফেরত কর্মীরা
একটু ভালো করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে ১৪ বছর আগে বাহরাইনে পাড়ি জমিয়েছিলেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির ৩৫ বছর বয়সী মাহবুবুর রহমান। গত ফেব্রুয়ারিতে ছুটিতে দেশে এসে করোনা ভাইরাসের মহামারীর মধ্যে আটকা পড়েন তিনি। এর মধ্যে তার ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে।
প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘সেখানে গিয়েছিলাম ধার-দেনা করে। এক কোম্পানির রিসেপশনে কাজ করে ৪০ হাজার টাকার মতো পেতাম, তাতে মোটামুটি চলছিল। এখন দেশে আটকে থেকে আবার ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। বাহরাইনে ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন কমছে। কি যে করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
মাহবুবের মতো একই স্বপ্ন নিয়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের ছোট কালিয়াকৈর গ্রামের ৩২ বছর বয়সী মো. কবির হোসেন কাতারে গিয়েছিলেন ২০১০ সালে। অল্প বেতনে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে পরে একটি গ্যাস প্লান্টের কর্মচারীর চাকরি পেয়েছিলেন।
জানুয়রির প্রথম সপ্তাহে দেড় মাসের ছুটিতে দেশে এসে তিনিও আর কাতারে ফিরতে পারেননি। ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন তাকে আবার নতুন করে কোম্পানির অনুমোদন নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে চাকরিতে ফেরত নেবে। কিন্তু টিকিটের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ওখানে গিয়ে সাত দিন কোনো হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়ে দেশে এসে সাত মাস পার হয়ে গেছে। এই কয় মাসে আত্মীয়স্বজনের কাছে বেশ কিছু ধার-দেনাও হয়ে গেছে। এখন আবার দেড়-দুই লাখ টাকা জোগাড় করা আমার জন্য অনেক কঠিন।’
কবির ও মাহবুবুরের মতো প্রবাসী কর্মীদের আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিদেশে থাকা এমন কর্মীর সংখ্যা ১ কোটির বেশি।প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গত ৪ মাসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৮০ হাজার প্রবাসী ফিরে এসেছেন অথবা তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তবে এপ্রিলের আগে যারা ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন, তাদের সংখ্যা ধরলে এই সংখ্যা পৌনে ৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান।
খবর সারাবেলা / ২৫ আগস্ট ২০২০ / এমএম