সংকট কাটিয়ে সচল হচ্ছে দেশ
মহামারী করোনা সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সারা দেশের জীবনযাত্রা। করোনা নিয়ে প্রথম দিকে চরম ভয় আর আতঙ্ক ছিল দেশবাসীর মনে। এরপর সেটি উৎকণ্ঠায় রূপ নেয়ার পর এখন তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংক-বীমা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বাইরের জেলাগুলোয় শপিং মলসহ দোকানপাট আগেই খুলে দেয়া হয়েছে।
খোলা রাখার সময়সীমা বিকেল চারটা থেকে বাড়িয়ে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। সড়ক ও নৌপথে বাড়ছে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল। করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক অনেকটা কমেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ব্যবহার, অফিসে যাতায়াত এবং কেনাকাটা করছে অধিকাংশ মানুষ। ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে শেয়ারবাজার। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গতকাল শনিবার দুটি উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
মূলত প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নানা বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেই সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে। দুই মাস আগের চেয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ অনেক বাড়লেও সুস্থতার হার তুলনামূলক অনেক বেশি। কেবল বাসায় চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাই করোনার ভয় ও আতঙ্ককে জয় ও জীবন-জীবিকার হিসাব কষে জনগণ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আরো সচেতনতা জরুরি বলে মনে করেন তারা। যদিও কারো কারো মতে, আগের চেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি। মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা সবে যেতে শুরু করেছেন। পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। ‘ভয় নয়, সচেতনতায় হবে জয়’-এমন সেøাগান সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে দেশ।
সরকারি তথ্যমতে, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ২৮৮ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭০ হাজার ৭২১ জন। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২৯ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৯৯৭ জনে।
এর আগে গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। এরপর করোনার বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সারা দেশে অঘোষিত লকউাউন কার্যকর করে সরকার। প্রায় আড়াই মাসের লকউাউনে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। মানুষকে নিরাপদ রাখতে সরকারিভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গত মাসে শর্ত সাপেক্ষে যানচলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। পরে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও মার্কেটগুলো খুলে দেয়া হয়। প্রার্থনার জন্য মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে যেতে বাধা কেটে যায়।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস ঘরবন্দী থাকার পর সাধারণ ছুটি তুলে দিয়ে ‘লকডাউন’ শিথিলের ঘোষণা দেয় সরকার। এর পরই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালু, কর্মীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া এবং মসজিদ খুলে দেয়াসহ দেশের অভ্যন্তরে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াতের ওপর থেকেও উঠে যায় নিষেধাজ্ঞা। এর পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মানুুষের জীবনযাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে। যানবাহনে চলাচল ও মার্কেটগুলোয় কেনাকাটা করতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। ঢাকাসহ বড় শহরের গার্মেন্টগুলোতে পুরোদমে কাজ করছেন শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে ঘরে অবরুদ্ধ মানুষ এমনকি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও যেতে শুরু করেছে।
এদিকে গতকাল থেকে রাজধানীর পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা ওয়ারীতে লকউাউন কার্যকর করা হয়েছে। আগামী ২১ দিন ধরে চলবে এ লকউাউন। এর আগে রাজাবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলক লকউাউনে সফলতা আসে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তাদের মতে, এত বড় ঢাকা শহরে একটি এলাকা লকউাউনে গোটা শহরের স্বাভাবিক জীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। পর্যায়ক্রমে এভাবে আরো কয়েকটি এলাকায় লডডাউন দেয়া হবে। তার পরও জনজীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য আরো স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বাভাবিক হচ্ছে শেয়ারবাজার: এদিকে মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যেই আবার তেজি ভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ধীরে ধীরে বাজার স্বাভাবিক হওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মনে আশার সঞ্চার হচ্ছে। তবে সুশাসন থাকলে এই বাজার ধীরে ধীরে আরো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
তবে কালো টাকা শর্তহীনভাবে শেয়ারবাজারে আসার সুযোগ দেয়া হলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাজার দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুই আসনে উপনির্বাচন ১৪ জুলাই: আগের চেয়ে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মাঠে গড়াচ্ছে নির্বাচনও। বগুড়া-১ ও যশোর-৬ সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনে ১৪ জুলাই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলমগীর। গতকাল ইসির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। সচিব বলেন, নতুন করে কোনো মনোনয়নপত্র জমা, দাখিলের প্রয়োজন নেই। যেসব প্রার্থী ছিলেন এবং যে অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল, সে অবস্থা থেকেই আবার কার্যক্রম শুরু হবে।
ওই দুই সংসদীয় আসনে ২৯ মার্চ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে স্থগিত করা হয়। এখন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে এই নির্বাচন করছে ইসি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধান নির্ধারিত ১৮০ দিন শেষ হতে যাচ্ছে-বগুড়া-১ আসনে ১৫ জুলাই এবং যশোর-৬ আসনে ১৮ জুলাই।
খবর সারাবেলা / ০৫ জুলাই ২০২০ / এমএম