অমর একুশে গ্রন্থমেলার স্থান পরিবর্তন হচ্ছে

October 30, 2019

২০২০ সালে অর্থাৎ আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে আগের জায়গায় বসছে না গ্রন্থমেলা। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলার কিছুটা স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে। বিগত কয়েকবছর ধরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনার কালীমন্দির, মুক্তমঞ্চ ও স্বাধীনতাস্তম্ভের জলাধারের মাঝখানের জায়গাটিতে বসতো। এবারে সেই স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এজন্য শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বরমুখী সড়ক ঘেঁষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট ও তিন নেতার মাজার পর্যন্ত এলাকায় একুশের গ্রন্থমেলার আয়োজন চলছে। তবে বাংলা একাডেমির ভেতরের অবস্থান আগের মতোই থাকছে। অমর একুশের মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ মানবকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রথা অনুযায়ী ২০২০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এই মেলার স্থান হবে শাহবাগ হয়ে দোয়েল চত্বরমুখী সড়ক ঘেঁষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট থেকে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত। এবারের মেলায় আগতরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবিরহাট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি চত্বর এবং বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সবমিলিয়ে বইপ্রেমীদের জন্য ১৩টি প্রবেশদ্বার থাকবে। তবে চলতি বছরের আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মেলার স্থান ও সীমানা চূড়ান্ত করা হবে।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব পাশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কোনো আয়োজন করা সম্ভব নয়। সেদিকটা বিবেচনা করে এবারের মেলা উদ্যানের পশ্চিম পার্শ্বে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ডিজিটাল সার্ভে করা হয়েছে। ২০২০ সালের মেলার জন্য বেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলা একাডেমি।

ইতোমধ্যেই মেলা পরিচালনা কমিটির সভায় মেলার নীতিমালার চূড়ান্ত হয়েছে। মেলার স্টল বরাদ্দের জন্য গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে বাংলা একাডেমি। জানা গেছে, আগামী ১ জানুয়ারি মেলার স্টল বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন স্টল বরাদ্দের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার পর শুরু হবে সাজ-সজ্জার কাজ। যা চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।

২৫ জানুয়ারির মধ্যে স্টল সজ্জার কাজ শেষ করতে হবে। এবারো গ্রন্থমেলার নকশা ও সাজসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। এরইমধ্যে প্রাথমিক নকশা করা হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত নকশা পাওয়া যাবে। তার উপর ভিত্তি করে কাজ শুরু করবে একাডেমি। এবারের মেলার জায়গাটিতে অনেক গাছ-পালা আছে, আবার বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গকৃত এই মেলার সাজ-সজ্জাতেও বিষয়টির প্রাধান্য থাকবে।

এ ছাড়া এবার বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলা যখন চলবে, তখন পুরোদমে চলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। যে সড়কের পাশে মেলা বসছে, তাতে ব্যারিকেড দিয়ে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কে কোনো ধরনের সরঞ্জাম না রাখার বিষয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে জানিয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের গ্রন্থমেলার জন্য এর মধ্যেই স্টল বরাদ্দের জন্য আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে এবং মেলা ও অনুষ্ঠানমালার স্পন্সরশিপ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবারই মেলা স্বল্প সময়ের প্রস্তুতির মধ্যে হয়ে থাকে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই চার মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এবারের মেলা অন্য যে কোনো বারের চেয়ে গোছানো হবে বলে জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও কমিটির সদস্যরা।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ অমর একুশে গ্রন্থমেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হচ্ছে। যার ছোঁয়া থাকবে মেলার সজ্জায়, বইয়ের পাতায়। ইতোমধ্যেই প্রণীত মেলার নীতিমালায় এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে মেলা পরিচালনা কমিটি।

বাংলা একাডেমির এই পরিচালক আরো বলেন, ২০১৯ সালের মতো ২০২০ সালের গ্রন্থমেলার নকশা ও সজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন এনামুল করিম নির্ঝর। প্রাথমিক নকশা ইতোমধ্যেই করা হয়েছে। এবারের মেলায় আগত বইপ্রেমীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবিরহাট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি চত্বর এবং বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সবমিলিয়ে ১৩টি প্রবেশদ্বার দিয়ে মেলায় প্রবেশ করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, প্রাথমিকভাবে বইমেলার উদ্যানের অংশের স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাঙ্গণ পরিবর্তনের বিষয়ে ৪ নভেম্বর বিস্তারিত জানা যাবে। এবারের বইমেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করায় মেলার সজ্জায় তার ছোঁয়া থাকবে। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবারের মেলা নান্দনিক হবে বলে মনে করেন তিনি।

খবর সারাবেলা / ৩০ অক্টোবর ২০১৯ / এমএম