কোষাগারে ফেরত আনা হচ্ছে ৩৫২ কোটি টাকা: প্রকল্পের শুল্ক-ভ্যাটের অর্থ পড়ে আছে দীর্ঘদিন

October 21, 2019

এবার সরকারি প্রকল্পে পণ্য আমদানির অব্যয়িত শুল্ক ও মূসক-এর ৩৫২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত আনা হচ্ছে। এ অর্থ কাস্টমস কমিশনারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য শিগগির উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারির করবে মন্ত্রণালয়টি। এ সংক্রান্ত বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শুল্ক ও মূসক খাতের অব্যয়িত অর্থ ফেরত আনতে ওই বৈঠক আহ্বান করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) মো. হাবিবুর রহমান। বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্যের শুল্ক ও মূসকের অর্থ পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি। এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে আনা হবে। এজন্য একটি প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। এ অর্থ সরকারি কোষাগারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

চটগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার কাজী জিয়া উদ্দিন বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাপ্ত কিনা প্রকল্প অফিস থেকে তা জানানো হয় না। যে কারণে ওই প্রকল্পগুলোর শুল্ক ও মূসকের অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেয়া সম্ভব হয় না।

সূত্রমতে, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে আমদানির বিপরীতে পণ্যের শুল্ক ও মূসক পরিশোধ করতে বরাদ্দ রাখা হয়। অনেক সময় বরাদ্দের পুরোটা ব্যয় হয় না। ফলে এসব অর্থ বিভিন্ন কাস্টম হাউসের ব্যাংক হিসাবে পড়ে আছে। যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে- সেসব ক্ষেত্রে এ খাতে কত টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে তা জানতে চেয়ে অর্থ বিভাগকে গত ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দেয় হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ কাস্টম হাউসগুলোর কাছে চিঠি দেয়।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অর্থ বিভাগ থেকে একটি হিসাব দিয়ে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত কমিশনার অব কাস্টমসের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৩৫২ কোটি ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা পড়ে আছে।

বৈঠকে অতিরিক্ত হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (হিসাব ও পদ্ধতি) মোহাম্মদ মমিনুল হক ভুঁইয়া বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শুল্ক কর ও ভ্যাটের অর্থ জমা দিতে হবে- তা আগের নির্দেশনাই রয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলোর এ বাবদ অর্থ জমা থাকলে তা আগের পদ্ধতিতেই ব্যবহারের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন।

বৈঠকে নেয়া প্রথম সিদ্ধান্তে বলা হয়, এ অর্থ ফেরত আনার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত সমাপ্ত হয়েছে ওইসব প্রকল্পের তালিকা তৈরি করে কাস্টম হাউসে পাঠাবে। কাস্টম হাউসগুলো সমাপ্ত প্রকল্পের অর্থ ট্রেজারিতে জমা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ অর্থ বিভাগকে জানাবে। এছাড়া প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কেও এ প্রতিবেদন দিতে হবে।

দ্বিতীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়, চলমান প্রকল্পের শুল্ক ও মূসক বাবদ অর্থ কাস্টম হাউসে অব্যয়িত থাকলে তা ব্যবহার করা যাবে পরবর্তী অর্থবছরের শুল্ক ও মূসক পরিশোধের জন্য। এছাড়া কোনো প্রকল্পের শুল্ক ও মূসকের জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন হলে তা নতুন নিয়ম অনুযায়ী অথরিটি জারির মাধ্যমে ব্যয় করতে হবে।

তৃতীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়, শুল্ক ও মূসক বাবদ অর্থ পরিশোধের হিসাব পদ্ধতির বিষয়ে অর্থ বিভাগ বিস্তারিত নির্দেশনা দেবে। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্যের শুল্ক ও মূসক বাবদ পড়ে থাকা অর্থ কোষাগারে ফেরত আনাসহ এ খাতে অর্থ বরাদ্দ, ছাড়করণ, অথরিটি জারি, হিসাব পদ্ধতি তুলে ধরে আগের জারি করা ‘উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি’ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশোধন করতে হবে। এসব কাজ শেষে অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-৪) শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, প্রকল্প বা আমদানির কার্যক্রম শেষ হলে সিডি ভ্যাট বাবদ অব্যয়িত অর্থ ফেরত দিতে হবে। প্রকল্পের কাজ শেষে পূর্ণাঙ্গ হিসাবও শেষ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারির আগে চলমান প্রকল্পের শুল্ক কর ও ভ্যাট বাবদ অর্থ কাস্টম হাউসে জমা থাকলে তা সমন্বয় করা যাবে এবং তা পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী হবে।

এর আগে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৬৮ সংস্থার কাছে অলস পড়ে থাকা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়া হবে। ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। তখন বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর অলস পড়ে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

খবর সারাবেলা/২১/ অক্টোবর ২০১৯ /এসএম