লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম: স্বল্প আয়ের মানুষের কপালে ভাঁজ

নিত্যপণ্যের লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েইে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল ডালের পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। নতুন করে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে মান ভেদে ১০- ১৫ টাকা। একই ভাবে কাচা মরিচ কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। সবজিতে কেজিপ্রতি ১০-২০ বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে মাছ, মুরগি ও মাংসের দামও।

এদিকে খোলা বাজার থেকে উধাও সয়াবিন তেল। ব্যবসায়ীদের দাবি, কোম্পানিগুলো সয়াবিন সরবরাহ করছে না। আর ক্রেতারা বলছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। অসহায় ক্রেতা ব্যবসায়ীর মর্জি অনুযায়ী দাম পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কেউ কেউ ১৬৮ টাকার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা লিটার দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৭ লাখ টনের বেশি চাল মজুদ রয়েছে, যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সরকারের চালের মজুদের রেকর্ড। এর পরও বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসছে না। সাধারণ মানের মোটা চালের দামও এখন অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ৬৫ টাকার মিনিকেট চাল এখন কেজিপ্রতি ৬৮ টাকা। এছাড়া নাজিরশাইল চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। পোলাওয়ের চালের দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি হলেও ফুলকপি, সিম, বেগুনের দাম প্রায় একই। বরবটি ও ঢ়েঁড়শ ও করলার দাম ১০ টাকা ছাড়িয়েছে। বরবটি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। তবে একপোয়া কিনলে গুনতে হচ্ছে ৪০ টাকা। ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আর ভালো মানের করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

বাজারে প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, ফুল কপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, পাতা কপি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০- ১০০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা ও মটরশুটির কেজি ১২০ টাকা। আর মরিচের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা।

খিলগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, কমদামে সবজি খাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সব ধরনের সবজির দাম বাড়ছে। কয়েকটি সবজির দাম এখনই একশ টাকার ওপরে। কিছুদিন পর আরো বেশ কয়েকটি সবজির দাম একশ টাকা ছাড়াবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বেশি দামে কিনি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করি।

বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। চায়না রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। দেশি আদার কেজি ৬০ টাকা। চায়না আদার দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। গতসপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়ে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি।ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবকিছু বাড়তি দামেই তাদের কিনতে হচ্ছে। যার কারণে তারাও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।

নিউমার্কেট কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। চাহিদার তুলনায় বাজারেও পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজও আমদানি বন্ধ। যার ফলে দাম বেড়েছে।একই বাজারের ব্যবসায়ী মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। এরপর আবার কমে যায়। এখন পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোলমাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। বড় চিংড়ি ৮০০ টাকা কেজি, ছোট চিংড়ি ৬০০ টাকা কেজি। এছাড়া ইলিশ মাছের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ১০০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।

গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। খাসির দাম ৮০০ টাকা কেজি। বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকা কেজি। বেড়েছে লেয়ার মুরগির দাম। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৩০ টাকা কেজি।

হাতিরপুল বাজারের মুরগি বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, মুরগির খাবারের দাম বাড়তি, তাই খামারিরা দামও বেশি নিচ্ছেন। আমাদেরও সে অনুযায়ী বিক্রি করতে হচ্ছে।ডিমের বাজার চড়া অনেক দিন ধরেই। এখন লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। আর সোনালী (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে সল্প আয়ের মানুষেরা। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষেরা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলতে পারছেন না। যার ফলে তাদের দু-বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা সেলিম মিয়া রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন এর কম বেশিও হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে আর হিসাব মেলাতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘যে ভাবে নিত্যপন্যের দাম বাড়ছে তাতে এ আয়ে কোন মতেই আর সংসার চলে না। বেঁেচ থাকাই এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।লালবাগের বাসিন্দা আহদে সজিব জানান, মাস শেষে যা বেতন পাই তার অর্ধেকের বেশি যায় বাসা ভাড়ায়। আর যা থাকে তা দিয়ে ২০ দিনের বাজারও হয় না। সব জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে, কম দামি জিনিস বলতে এখন কিছু নেই।

খবর সারাবেলা / ০৫ মার্চ ২০২২ / এমএম