বিদ্যুৎ খাতের কাঁচামাল আমদানিতে রয়েছে রেয়াতি সুবিধা
বিদ্যুৎ খাতের কাঁচামাল আমদানিতে রয়েছে রেয়াতি সুবিধা। আর এ সুযোগে তথ্য গোপন করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য আমদানি করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এতে বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই বিষয়টি নিয়ে খোদ কাস্টমস কমিশনাররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সঠিকভাবে নীতিমালা প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়ার হয়েছে মাঠপর্যায়ে কমিশনারদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে এনবিআর, বিদ্যুৎ বিভাগ, কাস্টম হাউস ও সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে এনবিআরের সদস্যকে (কাস্টম নীতি ও আইসিটি) আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে এনবিআরের শুল্ক নীতি বিভাগের দ্বিতীয় সচিবকে। উচ্চপর্যায়ের এ কমিটির সদস্যা রাখা হয়েছে মোট ৮ জনকে।
তারা বিদ্যুৎ খাতের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনার পাশাপাশি সমন্বিত প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে সুপারিশ করবে। সেই সঙ্গে এ খাতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য পণ্য চিহ্নিত করবে কমিটি। এ ছাড়া এসব পণ্যের স্পেশিফিকেশন, স্থানীয় উৎপাদন, শিল্পস্বার্থ সংরক্ষণ, আমদানির আবশ্যকতা, রেয়াত প্রদানের যৌক্তিকতা, রেয়াতের পরিমাণ পর্যালোচনা করে রেয়াতযোগ্য ও রেয়াত বহির্ভূত পণ্যের তালিকা চূড়ান্তের ব্যাপারে সুপারিশ করবে।
জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য ১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ আমদানিকৃত ইকুইপমেন্ট, ইরেকশন ম্যাটেরিয়ালস, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি এ সুবিধা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য ড্রেজার ও বোট আমদানি করা হয়েছে। এ ছাড়াও আমদানিকারকেরা তথ্য গোপন করে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী, রড, স্টিল, মিট, প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং, বোল্ডার স্টোন, এমএস রড, স্টিল প্লেট, স্টিল স্ট্যাকচার, যানবাহনের নির্মাণসামগ্রী, অ্যাংকর বোট আনছে। এর মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, গত ১৪ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করে এনবিআর। সভায় বেনাপোলের কাস্টমস কমিশনার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি পণ্য নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। মূলত এনবিআরের দুটি প্রজ্ঞাপনে সুনির্দিষ্ট পণ্য তালিকা নেই।’ এ জন্য তালিকা সুস্পষ্টকরণের পরামর্শ দেন তিনি। পায়রা কাস্টম হাউসের কমিশনার বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সম্প্রতি নদী খনন কাজে ড্রেজার ও অ্যাংকর বোট আমদানির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ ছাড়াও আমদানিকারকরা বিভিন্ন তথ্য গোপন করে বিদ্যুৎ খাতের আড়ালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অন্য পণ্য আমদানির চেষ্টা চালায়।’
বৈঠকে মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার বলেন, ‘বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে। অথচ এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন রয়েছে। ফলে এ ধরনের পণ্যে আমদানি সুবিধা দেওয়া হলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ এনবিআরের শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য বলেন, ‘বিদ্যুৎ একটি সংবেদনশীল খাত। এ জন্যই রাজস্ব নীতি সহায়তা বজায় রাখা প্রয়োজন। তবে নীতিবহির্ভূতভাবে কেউ যাতে রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।’
খবর সারাবেলা / ২৯ আগস্ট ২০১৯ / টি আই