শাহজাদা সেলিম রেজার গল্প ‘বন্ধুত্ব’

এক বড় ভাইয়ের ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি নিজেও জানি না। সম্ভবত দুপুর পৌনে ১টা বাজে। বালিশের পাশে রাখা ফোন কাঁপছে। ঘুম ঘুম চোখে আমি।

– হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?

অপর পাশ থেকে সালামের উত্তর দিয়ে-

– তুমি কি এখনো ঘুমে?

– হুম, ঘুমে। আপনি কে জানি বলছেন?

অপর পাশ থেকে হাসতে হাসতে,

– তুমিই বলো কে আমি?

বিছানা থেকে একলাফে উঠে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে নাম দেখার পর হাসতে হাসতে বলছি,

– আচ্ছা আপনি, কেমন আছেন?

– ভালো আছি। তুমি তো একটু বেশিই ভালো আছো তা বুঝতেই পারছি।

– আমি বেশি ভালো আছি মানে? বুঝলাম না।

– তুমি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে গিয়ে কি লেখো?

– আমি আবার কি লিখলাম। কিছুই তো না।

– রেজা, তোমার বয়স কত তা বেশ ভালো করেই জানি আমি? তুমি বারবার ১৬, ১৬ করো। তোমার উনি করে সম্বোধন করে কথা বলার কেউ নাই। এগুলো কোন ধরনের ফাজলামো শুরু করছো?

মেয়েটা প্রচণ্ড রেগে আছে। রেগে থাকা স্বাভাবিক। গতরাতে ১৮ বার ফোন করেছে। আমি একবারও বুঝতে পারিনি বলে ফোন রিসিভ করতে পারিনি। দেশের বাইরে থাকে, ফ্লোরিডায়। অনেক আগে একবার বলেছিল ১০/১১ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান। যে কারণে সময় মিলে না।

ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে গিয়ে আমি একটু দুষ্টুমি, ফাজলামো করে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন রকম কমেন্ট করি। এখন এ কথাও যদি তাকে বলতে যাই সে ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’ করে কথা বলবে। আবার যদি কিছু না বলি তখনও এই একই স্বরে কথা বলবে। মেয়েটা যতটা ভদ্র ঠিক ততোটাই রাগী ও জেদি। ওর তুই-তোকারি ব্যবহার আর চাপে মাঝে মাঝে আমারও রাগ হয়। কিন্তু কিছুই বলতে পারি না; কারণ লক্ষ্মী হলেও সে জেদি।

২০২০ সালের মার্চে মহামারি করোনাভাইরাসের জন্য দেশে লকডাউন ঘোষণা হলো। তখনও ঢাকায় থেকে অফিস করেছি, হোম অফিস করেছি। লকডাউন ঘোষণা করায় তখন থেকে এখন পর্যন্ত পুরো বিল্ডিং ফাঁকা। একা একা কিভাবে দিন কাটাচ্ছি, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত হচ্ছে কিনা, বেঁচে আছি কিনা কেউ জানতে চায়নি। মাঝে মাঝে ঘুমানোর আগে মনে হয়, ঘুমের ঘোরে মরে থাকলেও আমার পরিবারের জানতে হয়তো অনেক সময় লেগে যাবে! কারণ এই শহরে আমার খোঁজ রাখার মতো কেউ নেই যে!

মেয়েটা রাগ করুক আর যাই করুক, তবুও ভালো। গত ৫-৬ বছরে এই ঢাকায় অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে আমার। কই, তাদের কেউ তো কোনোদিন ১ মিনিটের জন্যও ফোন করে জানতে চায়নি কেমন আছি, কিভাবে দিন কাটাচ্ছি? এলোমেলো কিংবা অগোছালো জীবন নিয়ে কারও জানার আগ্রহ হয়নি। আসলে তাদের অধিকাংশই নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য, কাঙ্ক্ষিত কিছু পাওয়ার জন্য পরিচিত হয়েছিল আমার সঙ্গে। সেটা মূলত কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক নয়। আর প্রকৃত সম্পর্কে মান-অভিমান, রাগ কিংবা ক্ষোভ যাই থাকুক তা কখনো ফাটল ধরে না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট থাকে; আজীবন।

খবর সারাবেলা / ২০ এপ্রিল ২০২১ / এমএম