রমজানের আগেই দাম বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের

রমজানের আগেই চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে ডাল, ছোলা ও ভোজ্যতেলের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে রমজানের অন্যতম পণ্য ডাল ও ছোলার দাম বস্তাপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া লাগামহীনভাবে বাড়ছে চালের দামও। ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডাল, ছোলা ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে।

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা তিন হাজার ১৫০ টাকা থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ছোলা বিক্রি হয় তিন হাজার টাকায়। অস্ট্রেলিয়ার মাঝারি মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা তিন হাজার টাকার বেশি দামে। কয়েকদিন আগে তা বিক্রি হয় দুই হাজার ৬০০ টাকায়। একইভাবে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডালের দামও বাড়ানো হয়েছে। চালের বাজারও অস্থির।

দুই হাজার ৮০০ টাকার কাটারি চাল বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে ভালোমানের মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯৫ টাকা করে। প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হয় চার হাজার ৭৫০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০৮ টাকা করে। আর প্রতিবস্তা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৪০০ টাকায়। খেসারির ডাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রমজান সামনে রেখে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য মজুত শুরু করায় বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চললে রমজান শুরুর আগে অনেক পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। তাই সরকারের উচিত এখনই বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইতোমধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। আমদানিকারকদের কারসাজিতে চিনির দাম বেড়েছে। সংকট দেখিয়ে সুপারপাম ও পামওয়েলের দামও বাড়ানো হয়েছে। অবৈধভাবে অধিক মুনাফার আশায় ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। প্রশাসন এ সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ট্যারিফ কমিশন ও সরকারি হিসাবে দেশে প্রতি মাসে ছোলার চাহিদা গড়ে ১২ হাজার টন।

বছরের চাহিদা এক লাখ ৪৪ হাজার টন। তবে রমজানে চাহিদা দু-তিন গুণ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে ছোলা আমদানি করা হয়েছে। দুবছর ধরে আমদানিকারকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ছোলা আমদানি করে আসছে। এতে কয়েক বছর ধরে দেশে ছোলার সংকট থাকছে না। এবারও স্থানীয় আমদানিকারক ছাড়াও দেশের কয়েকটি শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি করেছে। এসব ছোলা ইতোমধ্যে বাজারে প্রবেশ করেছে।

তবে দুদিনে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ছোলা কিনে নিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ছোলার দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে চট্টগ্রামের কোথাও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করছে।

নগরীর পাইকারি বাজারগুলোয় নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি লিটার খোলা পামসুপার তেল ১০৬-১০৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১১৫-১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার সাত টাকা বেশি দামে খোলা সয়াবিন ১২৭-১৩০ টাকা ও পামসুপার ১১২-১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৪০-৬৫০ টাকা, যা নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি। রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতলজাত তেলের মোড়কে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৮৫ টাকা। তবে বাজারে এ ব্র্যান্ডের তেল ৬৬৫-৬৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যদিও সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এর দাম ৬৩০ টাকার বেশি বিক্রি হওয়ার কথা নয়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৩৭-১৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও সর্বোচ্চ দাম ১৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, ‘বিষয়গুলো আমাদের নজরে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

খবর সারাবেলা / ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ / এমএম