মা হলেই কি ফিটনেস শেষ
ফিটনেস শুধু শারীরিক ব্যাপার নয়, মানসিক ব্যাপারও। সন্তানের সঙ্গে আনন্দময় সময় দেয় মানসিক প্রশান্তি ফিটনেস শুধু শারীরিক ব্যাপার নয়, মানসিক ব্যাপারও। সন্তানের সঙ্গে আনন্দময় সময় দেয় মানসিক প্রশান্তি আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন নারী মা হওয়ার পর ধরেই নেন, তাঁর শারীরিক ফিটনেস ও সৌন্দর্য শেষ হয়ে গেছে। মা হওয়া মানেই ফিটনেস হারিয়ে ফেলা নয়, নয় আত্মবিশ্বাস বা শক্তি কমে যাওয়া। মা হওয়ার সময়টুকু যে সাময়িক পরিবর্তন ঘটে মেয়েদের শরীরে, চেষ্টা করলে তা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা যায়।
নারীজীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ের মধ্যে সুন্দরতম একটি পর্যায় গর্ভাবস্থা। গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই সাধারণ সময়ের মতো সবধরনের কাজে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এসময় গর্ভমতী মাকে মেনে নিতে হবে কিছু বিধিনিষেধ এবং সঙ্গে মেনে চলতে হবে কিছু নতুন নিয়ম। তবে তাই বলে গর্ভবতী নারীকে একঘরে করে দেয়া যাবে না।
গর্ভবতী নারীদের ওপর সাধারণত মানসিক চাপও একটু বেশি থাকে। আমাদের দেশে একধরনের ট্যাবু আছে যার কারণে সাধারণত নারীদের একঘরে করে দেয়া হয়। বলা হয়, এ সময় শুধুমাত্র বাচ্চার জন্য বেশি করে, খাবার দাবার আর বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু একজন গর্ভবতী নারীর এ সময়টাতে থাকা উচিত উৎফুল্ল ও প্রাণবন্ত। আর এক্ষেত্রে পোশাক ও সাজগোজ অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। সাজগোজ বলতে ভারী মেকআপ নয় নিজের যত্ন ও নিজেকে পরিপাটি রাখাকে বোঝানো হয়েছে।
কিন্তু মা হওয়ার সময় তারা ভাবেন কখনোই তিনি আর সেই ‘পুরনো মেয়েটিতে ফিরে যেতে পারবেন না, যিনি কিনা একদিন শহর দাপিয়ে বেড়াতেন বন্ধুদের সঙ্গে, নাটক বা সিনেমা দেখতে ছুটতেন যখন–তখন, লাফিয়ে লাফিয়ে ৬ তলা সিঁড়ি ভেঙে কাজে যেতেন, কখনো কোনো অনুষ্ঠানে সুন্দর কোনো শাড়ি পরে সেজে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন। মা হওয়ার পর এই বেঢপ শরীর, ফোলা পেট, বাড়তি ওজন আর ফিটনেসের অভাব—একে মেনে নিয়েই চলতে হবে সারা জীবন।
বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো। সন্তান হওয়ার দেড় মাস পর্যন্ত থেমে থেমে মাসিকের মতো স্রাব হতে পারে, এ সময় পরিচ্ছন্নতার খুব দরকার। আর হ্যাঁ, তিন মাস পর থেকে স্বাভাবিক যৌনজীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব এবং তা উচিতও।
ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
আমাদের দেশে একজন নারী মা হওয়ার পর ধরেই নেন, তাঁর শারীরিক ফিটনেস ও সৌন্দর্য শেষ হয়ে গেছে। কখনোই তিনি আর সেই ‘পুরোনো’ মেয়েটিতে ফিরে যেতে পারবেন না। আসলে মা হওয়া মানেই ফিটনেস হারিয়ে ফেলা নয়, নয় আত্মবিশ্বাস বা শক্তি কমে যাওয়া। মা হওয়ার সময়টুকুতে যে সাময়িক পরিবর্তন ঘটে মেয়েদের শরীরে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা করলে তা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা যায়।
এসময়ে কিছু সতর্কতাও মানতে হবে। যেমন, বিউটি পারলারে যেসব সেবা নিতে আপনাকে উপুড় হতে হবে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। বাড়িতে নিজে নিজে পায়ের যত্ন নিতে গিয়েও উপুড় হতে হয়। তাই বাড়িতে অন্য কারও সাহায্য নিন বা এই সেবা নিন পারলারে। দীর্ঘ সময় বসে থেকে কোনো সেবা নিবেন না।
অধিকাংশ গর্ভবতী মায়ের মুখ ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, ফলে মুখে ব্রণ হয়, ত্বকে টান পড়ায় পেট, পায়ের অনেক অংশ ফেটে যায়। মুখে, গলায় ও ঘাড়ে কালো দাগ হতে পারে। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর মায়েরা হয়ে যান আরও ব্যস্ত। দিন-রাত এক করে সন্তান-সংসার সামলে উঠতেই হিমশিম খান তারা।
বেশিরভাগ শিশুই রাতে ঠিকমত ঘুমায় না আর মাকেও জেগে থাকতে হয় শিশুর দেখভালের জন্য। রাতের পর রাত জেগে থেকে নতুন মায়ের গর্ভাবস্থায় ত্বকের বসে যাওয়া ছাপগুলো আরও গাঢ় হতে থাকে।
একটা সময় যখন নিজেকে আয়নায় দেখেন, প্রথমে হয়তো চিনতেই পারেন না, সেই সব সময় পরিপাটি হয়ে চলা মেয়েটির এই মলিন চেহারা দেখে। মন খারাপ হয়ে গেল মন খারাপের কিছুই নেই। মানুষটি সেই আপনিই রয়েছেন। প্রয়োজন শুধু সামান্য যত্নের। তাই নতুন মায়েরও থাকতে হবে একটু গোছালোভাবে এবং অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।শিশুর সঙ্গে নিজের যত্ন নিন, সব সময় হাসিখুশি থাকুন। সুন্দর ও সুস্থ থেকে মাতৃত্ব উপভোগ করুন।
খবর সারাবেলা / ০২ মে ২০২৩ / এমএম