বিচার বিলম্বে ধর্ষণ বেড়েছে
দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে হাইকোর্টের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ বিশেষত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণপরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার দায় মূলত রাষ্ট্রের ওপরেই বর্তায়। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়।
বগুড়ার একটি শিশু ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ছয় দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। রায়ে ছয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রায়ের অনুলিপি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সব বিচারকের কাছে পাঠাতেও বলা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- সমন জারির পর ধার্য তারিখে অফিসিয়াল সাক্ষীদের (ম্যাজিস্ট্রেট/পুলিশ/চিকিৎসক বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ) সাক্ষ্য প্রদানে আদালতে হাজির হতে হবে। সন্তোষজনক কারণ ব্যতীত সাক্ষ্য প্রদানে হাজির না হলে সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ দিতে বিবেচনা করবেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যান্য সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো যে, ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার আসামিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া ও ধূর্ত প্রকৃতির। এরা ভিকটিম ও তার পরিবারের ওপর চাপ-প্রভাব বিস্তার করে আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে ভয়-ভীতি, প্রলোভনসহ বিভিন্ন ধরনের কূট কৌশল অবলম্বন করে। ক্ষেত্রবিশেষ সালিশের নামে সামাজিক বিচার করে ভিকটিম ও তার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য এবং আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকে। এ অবস্থায় সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকার দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে।
আদালত আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্ষণ, ধর্ষণপরবর্তী হত্যাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাগুলো বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ। এর মধ্যে ৪/৫ বছরের পুরাতন মামলার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অভিযোগ গঠনে বিলম্ব এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কয়েক মাস পরপর তারিখ পড়ছে। যদিও এ আইনের ২০(৩) ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে মামলা বিচারের জন্য নথি প্রাপ্তির তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে বিচার কাজ সমাপ্ত করার। এ ছাড়া শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে বিচার পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনাও যথাযথভাবে অনুসরণ ও প্রতিপালন হচ্ছে না। বিচার বিলম্বের জন্য ট্রাইব্যুনাল, পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্নিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের কাছে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্নিষ্টদের জবাবদিহি দৃশ্যমান হচ্ছে না।
খবর সারাবেলা / ২১ আগস্ট ২০১৯ / টি আই