বর্ষায় টনসিলের সমস্যা, ‍মুক্তি পেতে করণীয়

গরমের তীব্রতায় বর্ষা স্বস্তি নিয়ে এলেও নানা রোগবালাই ডালপালা মেলে এই সময়। বর্ষা মানেই বৃষ্টিতে ভিজে গলা ব্যথা, সর্দির সঙ্গে খুসখুসে কাশি। একদিকে নাক ফ্যাঁচফ্যাঁচ, তো অন্যদিকে গলা ভারী। যেন কয়েক মন পাথর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢোক গিলতে গেলেই একটা দলা পাকানো ব্যথা গলার কাছে জেগে ওঠে। মাঝে মাঝে মুখে দুর্গন্ধ।

রোগের লক্ষণ আসলে এগুলিই। রোগ ঠিক বলা যায় না যতক্ষণ না এর প্রকাশ ঘটে। ডাক্তাররা বলেন, গলায় একটানা ব্যথা, খাবার বা জল খেতে গেলেও সমস্যা হলে তাকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। মনে হতেই পারে ঠান্ডা লেগে গলা ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় গলার কাছের একটি মাংসল অঙ্গই এর ভোগান্তির মূলে আছে।

যাকে টনসিল বলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টনসিলে পাথর জমলে শুরুতে বোঝা যায় না। অনেক সময় ছোট ছোট স্টোন তৈরি হয় টনসিলে যা বিশেষ ক্ষতি করে না। কিন্তু টনসিল যদি ফুলতে থাকে এবং পাথরের আকারও বড় হয় সমস্যা তৈরি হয় তখনই। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হয় বা বাড়াবাড়ি হলে অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে। কিছু ঘরোয়া টোটকাও আছে যা নিয়ম করে মেনে চললে টনসিল স্টোনের ঝুঁকি কমে।

টনসিল কী?

গলায় ব্যথা মানেই ধরে নেয়া হয় টনসিল হয়েছে। টনসিল কোনো আতঙ্কের নাম নয়। বরং শরীরেরই এক রোগ প্রতিরোধক অঙ্গ। আমাদের মুখের ভেতরে জিভের শেষের দিকে গলার দু’পাশে যে মাংসপিণ্ড থাকে সেটি আসলে কতগুলো কোষের সমষ্টি।

একেই বলে টনসিল। এর কাজ হলো মুখের ভেতরে ঢুকে পড়া ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা প্যাথোজেনকে নষ্ট করে ফেলা। শ্বেত রক্তকণিকার সাহায্যে টনসিল জীবাণু প্রতিরোধের কাজ করে। তবে এই অঙ্গকেই যদি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ করে তখনই বিপত্তি বাধে। মাংসপিণ্ড ফুলে ওঠে, যন্ত্রণা শুরু হয়।

টনসিল আক্রান্ত হলে শরীরে জীবাণুর প্রকোপও বাড়ে। সেই থেকে নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, টনসিল যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তেমনি আরও একটি অঙ্গ একই কাজ করে। সেটা হলো অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি। যা নাকের পেছন দিকে থাকে। টনসিলের পাশাপাশি এই গ্রন্থিও সংক্রমণের কারণে বড় হয়ে যেতে পারে। তখন তাতে প্রদাহ হয়।

টনসিল স্টোন বোঝা যাবে কী করে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট করে বোঝার উপায় নেই যে টনসিলে পাথর জমছে। কিছু লক্ষণ দেখে সাবধান হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন গলা ব্যথা যদি ক্রনিক হয়ে যায় সেটা একটা বড় লক্ষণ। ঠান্ডার সময় বা বর্ষাকালে অনেকেরই গলা ব্যথা হয়। ঘুম থেকে উঠলে মনে হয় গলার কাছে কিছু দলা পাকিয়ে আছে, ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। এটাই যদি একটানা চলতে থাকে তাহলে সতর্ক হতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায়, খাবার চিবিয়ে গেলার সময় গলায় ব্যথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, খাবার গলার কাছে গিয়ে আটকে গেছে। পানি খাওয়ার সময়ও একই রকম সমস্যা হতে পারে। সেই সঙ্গে গলার কাছে যন্ত্রণা, প্রদাহ হওয়াটাও ভালো লক্ষণ নয়। তখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া দরকার। আসলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমেই টনসিল স্টোন তৈরি করে।

খালি চোখে দেখা যায় না। তবে যদি টনসিল ফুলে ওঠে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয় তাহলেই বুঝতে হবে টনসিলে স্টোন জমছে। আরও একটা লক্ষণ হলো মুখে দুর্গন্ধ হওয়া। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন পেটের সমস্যার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে। কিন্তু যদি ক্রনিক গলা ব্যথা ও সেই সঙ্গে মুখে গন্ধ হতে থাকে তাহলে সাবধান হতে হবে। এক্স-রে করলেই ধরা পড়ে টনসিলে পাথর জমছে কি না।

টনসিলে করণীয়

টনসিলের সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে অস্ত্রোপচার করে টনসিল বাদ দিতেই বলেন ডাক্তাররা। একে বলে টনসিলেকটমি (Tonsillectomy) । টনসিলেকটমি তখনই করা হয় যখন টনসিলাইটিস বা টনসিলের স্টোনের কারণে শ্বাসের সমস্যা শুরু হয় বা গলায় সংক্রমণ দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টনসিল ভালো রাখতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হবে। যাদের সর্দি-কাশির ধাত বা বাচ্চাদের যদি সাইনাসের সমস্যা থাকে তাহলে এই বর্ষার সময় নিয়মিত হালকা গরম জলে নুন মিশিয়ে কুলকুচি করতে হবে। মুখের ভেতর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তার জন্য দিনে দু’বার ভালো করে ব্রাশ করা জরুরি। মুখের ভেতরে, জিভে বা দাঁতের কোণায় যেন খাবার জমে না থাকে।

গলা ব্যথা হলে লেবু বা আদা দিয়ে চা খুব উপকারি। সেই সঙ্গে নুন-গরম পানিতে গার্গল করলে গলায় আরাম হবে। কোনোভাবেই গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না, সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডা নরম পানীয় বা আইসক্রিম পরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে।

দুধে অল্প হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। হলুদের অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রোগের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। এক গ্লাস উষ্ণ জলে গোটা একটি পাতিলেবুর রস, এক চা চামচ মধু ও অল্প নুন মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়া যেতে পারে। এতে গলা ব্যথাও কমে, টনসিলও ভালো থাকে। গ্রিন টি-তে মধু মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

খবর সারাবেলা / ৩১ আগস্ট ২০২০ / এমএম