প্রিয় পোষামাছ
কবিরের বাড়ি গ্রামে। ওর বাড়ির পাশেই ছিল একটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে ছিল একটা ছোটখাটো গর্ত। কয়েক হাত জায়গা নিয়ে ছিল গর্তটি। বৃষ্টির কারণে সেই গর্তে জমেছিল বেশ পানি। হাঁটুখানিক তো হবেই। কবির ঐ গর্তেই ছেড়েছিল দুটো মাগুর মাছ। তার বাবা বাজার থেকে একদিন অনেক ছোট ছোট মাগুর মাছ নিয়ে এসেছিলেন। সেখান থেকে সে দুটো মাগুর লুকিয়ে ছেড়েছিল এই ছোট্ট জলাশয়ে। প্রতিদিন কবির মাছ দুটোকে খেয়াল করত। মাঝেমাঝে লুকিয়ে সেখানে খাবার ছড়িয়ে দিত। ওই ছোট্ট জলাশয়ে যে মাছ থাকতে পারে, তা কেউ ভাবতেও পারে না। কবিরের বাবা-মাও সেটা টের পায় না।
কবির স্কুল থেকে ফিরে, স্কুলে যাবার সময় নানান অজুহাতে ওখানে একটু উঁকি মারত। সে মাঝেমাঝে মাগুর মাছের সাথে কথা বলত। মজা করত। এভাবে একদিন, দুইদিন করতে করতে ছোট মাছ মাগুর দুটো আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল। গর্তের পানি শুকিয়ে গেলে কবির সেখানে নলকূপ থেকে বালতি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পানি দিত। নতুন পানি পেয়ে মাগুর দুটো ছটফট করে লাফাত। তারা মাঝেমাঝে লেজ দিয়ে পানিতে ঘোলা দেয়, আবার থেকে থেকে মাথা তুলে চায় আকাশে। ছোট মাগুর দুটো এভাবে আস্তে আস্তে বড় হয়ে যায়। এভাবে অনেকদিন কেটে যায়। একদিন কবিরের আদরের মাছগুলো ধরা পড়ে তার মা আর বাবার চোখে। তারা কবিরকে কিছু বলে না। এটা দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে তারাও সেখানে খাবার দেয়। পানি দেয়। বাড়তি খাবার, পানি পেয়ে মাছ দুটো আরো বড় হয়ে যায়।
কবিরের বাড়ির পাশেই থাকতো মতিন নামের এক লোভী লোক। একদিন সকালে ওই পথ দিয়ে যাবার পথে তার চোখে পড়ে মাছ দুটো। সাথে সাথে সে পানি সেচে মাছগুলো ধরে নিয়ে যায় নিজ বাড়িতে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন কবির, তার মা আর বাবা কেউই বাড়িতে ছিল না। সবাই গিয়েছিল কবিরের নানার বাড়ি। পাশের গ্রামে। বেড়াতে। ঐদিন বিকেলেই তারা সবাই আসে বাড়িতে। বাড়িতে এসেই কবির দ্রুত যায় তার মাছ দেখতে। ঐখানে গিয়েই তার মাথায় বাজ পড়ে। একি! এখানকার পানি সেচে ফেলেছে কে! আর আমার মাছ দুটোই বা গেল কোথায়! এই বলে সে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। তার কান্নার আওয়াজ শুনে কবিরের বাবা-মাও এসে হাজির হয় সেখানে। মাছ না দেখে তাদেরও মন খারাপ হয়ে যায়। এরপর সবাই মিলে বের হয় ওই মাছের খোঁজে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে তারা তা খুঁজে পায় মতিনের বাড়িতে। তবে তা জীবিত না টুকরো টুকরো করে কাটা। মাছগুলো দেখে কবির হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। তার কান্না দেখে কেঁদে ফেলে তার মা। বাবাও। কবির কাঁদতে কাঁদতে বলে- বাবা, কেন এভাবে আমার মাছ দুটোকে মেরে ফেলল? বাবা কবিরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল- তোমার কাছে যেটা আদরের, সেটা অন্যের কাছে নাও হতে পারে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। ভালোবাসার জিনিসকে দেখে রাখতে হবে, কবির। বাবার কথাগুলো ভালো লাগে তার। এবার মা কাছে এসে বলে- শুধু ভালোবাসার জিনিসই না, সবকিছু দেখে রাখতে হবে। তাছাড়া দুষ্টু মানুষ তার ক্ষতি করবে। কবিরের মায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে তার বাবা। কবির এরপর থেকে সবকিছুতে ভালোভাবে নজর দেয়। কোথাও গেলেও নিরাপদে রাখে প্রিয় জিনিসগুলো। কিন্তু এখনো কবির সেই মাছগুলোর কথা মনে হলেই কেঁদে ফেলে।
খবর সারাবেলা / ০৩ জুলাই ২০২০ / এমএম