প্রাণ ফিরে পাক পর্যটন খাত
প্রাকৃতিক নৈসর্গের লীলাভূমি খ্যাত বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এ দেশ যুগ যুগ ধরে বিদেশি পর্যটকদের টেনেছে।দুনিয়াজুড়ে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সমৃদ্ধ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। পর্যটনকে শিল্প হিসাবে চিহ্নিত করায় বাংলাদেশে এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি।
মহামারি করোনায় থমকে গিয়েছিল এ শিল্প। গত ১৯ আগস্ট সারা দেশে খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। দ্বিতীয় দফায় ১৪০ দিন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পর্যটন খাত। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার পর সারা দেশে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, স্টেশনারিসহ সব ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রের সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সমুদ্রসৈকত, চিড়িয়াখানা, থিম পার্কসহ সবখানে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনায় দেশের পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ সময় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ছিল। রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বুকিং শুরু হয়েছে হোটেল-মোটেলগুলোয়। অগ্রিম বুকিং হয়েছে এক-তৃতীয়াংশ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপাড়ে নেমেছেন পর্যটক। ফলে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মনে।
দেশে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্রমণপিপাসা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে এ শিল্প। দেশে পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যাশিত অবকাঠামো উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত বিনোদনের সুযোগ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের আয় ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। আমাদের দেশেও পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় ও উন্নত করে তুলতে সরকারি পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব দেশে সমুদ্রসৈকত আছে, সেখানে সারা বছর পর্যটকের আধিক্য থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশে।
তাছাড়া আমাদের দেশে পাহাড় আছে, আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। তারপরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ কেন সেভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারছে না তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টের (টিএসএ) মাধ্যমে পর্যটন খাতের আন্তর্জাতিক মান, ধারণা ও সংজ্ঞা অনুযায়ী পণ্য ও সেবার মূল্যায়ন করা হয়।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ টিএসএ তৈরি করলেও বাংলাদেশে গত চার দশকেও এর জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। এই একটি কাজ করা সম্ভব হলেই আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাত ও প্রতিটি উপখাতের অবদান সম্পর্কে জানা যাবে। পর্যটন নিয়ে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করা আরও সহজ হবে।
একইসঙ্গে পর্যটনে আমাদের কোন দিকটি দুর্বল, কোনটি সবল তাও চিহ্নিত হবে। শুধু বিদেশি পর্যটক নয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতে কত ব্যয় করে এবং কতজন দেশের ভেতরে ভ্রমণ করে, তা বের করা যাবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান করণীয় হচ্ছে, পর্যটন স্পটগুলোকে প্রডাক্ট হিসাবে তৈরি করা। বিপণনের আগে পর্যটন পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা।
তাছাড়া পর্যটন ব্যবস্থাপনা অতি গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যথাযথ উন্নয়ন করা সম্ভব হলে বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি দেশের পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করা সহজ হবে। আমরা আশা করব, পর্যটন শিল্পের অবকাঠামো ও পর্যটন প্রডাক্ট উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবে।আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
খবর সারাবেলা / ২৬ আগস্ট ২০২১ / এমএম