প্রতারক হতে সাবধান
কাফরুলের তাহমিনা পারভীন। একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাহমিনার ফেসবুক আইডিতে কিছুদিন আগে উইলিয়াম ডেভিড নামের একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। সেই রিকোয়েস্টটি গ্রহণ করেন তাহমিনা। তখন মেসেনজারের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। একসময় উইলিয়াম ডেভিড তাহমিনার কাছে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চায়। পরে দু’জনের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত কথাবার্তা চলত।
কিছুদিন যাওয়ার পর উইলিয়াম উপহার পাঠানোর জন্য তাহমিনার কাছে তার বাসায় ঠিকানা চায়। পরে তিনি তার বাসার ঠিকানা দেন।কয়েকদিন পর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বেন কার্লোস নামের এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বলেন তিনি ডেল্টা কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। উইলিয়াম ডেভিড নামের এক ব্যক্তি ইংল্যান্ড থেকে একটি পার্শ্বেল পাঠিয়েছে। সেই পার্শ্বেলটি পাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের কাস্টমস অথরিটি ৪৫ হাজার টাকা দাবি করছেন। টাকা পরিশোধ করলেই সেই পার্শ্বেলটি পাওয়া যাবে। এজন্য বেন কার্লোস মো. সালাহ উদ্দিনের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার ব্রাঞ্চের একটি ব্যাংক হিসাব দেন।
তাহমিনা একই ব্যাংকের ডাচ্-বাংলা শাখা থেকে ওই হিসাবে ৪৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পেয়ে কার্লোস তখন উপহারটি দিচ্ছি দেবো বলে সময় নেন। এর কিছুদিন পরে কার্লোস আবার তাহমিনাকে ফোন করে বলেন, ওই উপহারের প্যাকেটের ভেতরে পাউন্ড আছে যা কাস্টমসের এক সিনিয়র কর্মকর্তার নজরে এসেছে।ক্লিয়ার করতে আরো ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। এত টাকা পাঠানোর জন্য সময় চাইলে কার্লোস তখন মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হওয়ার ভয়ভীতি দেখান। মামলার ভয়ে তাহমিনা আবার মো. একরাম মুন্সী নামের আরেক ব্যক্তির ডাচ্-বাংলা ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
তখন কার্লোস তাকে তাহমিনাকে জানায় সময় মত উপহারটি পেয়ে যাবেন। পরের দিন আবার কার্লোস তাকে ফোন করে জানায় উপহারের প্যাকেটের ভেতরে বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮০ টাকা থাকায় শতকরা ৩ শতাংশ হারে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩২০ টাকা ট্র্যাক্স জমা দিতে হবে।বারবার কেন এত টাকার জটিলতা, ওই সময় তাহমিনা কার্লোসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি ব্যস্ততায় রাজি হননি। তখন তাহমিনার আর বুঝার বাকি থাকে না তিনি বিশাল এক ফাঁদে পা দিয়েছেন।
প্রতারক ডেভিড নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ফুটবলও খেলেন। খেলাধুলার পাশাপাশি করেন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। কয়েক বছর আগে এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতেও যান। সেখানেই সখ্যতা গড়ে তোলেন বাংলাদেশি নাগরিক মো. ইসমাইল হোসেন (৪৮) সঙ্গে। কিছুদিন পর দু’জনেই জামিনে বের হয়ে আসেন।প্লান করে পুনরায় জড়িয়ে পড়েন এমন ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
তবে এবার অপরাধের ধরন পরিবর্তন করেন সে। সহজ-সরল নারীদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে ফাঁদে পাতেন।তারপর তাহমিনাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে নাইজেরিয়ান হেনরি ইশিকা ও মো. ইসমাইল হোসেন আটকের পর বের হয়ে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সতর্ক থাকুন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
আস্হা নির্ভরতার পিবিআইকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। (সংগ্রহ )
খবর সারাবেলা / ১৯আগস্ট ২০১৯ / টি আই