পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। ২০২২ সালের জানুযারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে ২১.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮.৩৯ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি রেড়েছে ৩৮.৩৯ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ইউরোপের বাজারে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন সবার শীর্ষে। তবে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। অর্থাৎ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইউরোপের বাজারে।

তিনি বলেন, ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী ইউরোপের ক্রেতারা এখনও বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে গ্রিন ফ্যাক্টরি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। তিনি মনে করেন, ইউরোপের ক্রেতাদের মধ্যে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ার আরেকটি কারণ বাংলাদেশের পোশাকের গুণগতমান আগের চেয়ে বেড়েছে।

ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট এর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ২০২২ সময়ের মধ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্ব থেকে ৯৫ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে। ২০২১ সালে একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইইউ বাংলাদেশ থেকে ২১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে। বাংলাদেশ ইইউ এর জন্য পোশাক আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি ৩৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

চীন ২৯ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে ইইউ’তে সর্ববৃহৎ পোশাক সরবরাহকারীর অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে চীন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি ২৭ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ২৯ শতাংশ ।

একই সময়ে তুরস্ক থেকে আমদানিও পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি ১১ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ভারত থেকেও আমদানি ৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ।

অন্যান্য শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ১৩শতাংশ, ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ২৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে যা হয়েছিল ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। শতাংশের হিসাবে ২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে তিন হাজার ২৪৫ কোটি ডলার বা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতি মাসে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে।

খবর সারাবেলা / ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ / এমএম