পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হবে দেড় লাখ কোটি টাকা
করোনা মহামারীর কারণে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষি খাত। এ খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে আগামী পাঁচ বছরে চার মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। প্রতি বছরের জাতীয় বাজেটের আওতায় সরকারি খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিনিয়োগের এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। ‘এগ্রিকালচার, ওয়াটার রিসোর্স, ল্যান্ড অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে কৃষি খাতের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়ও তুলে ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম মঙ্গলবার বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় কৃষি খাত আমাদের ত্রাণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। শিল্প ও সেবা খাত যখন একেবারেই স্থবির হয়ে যায়, তখন একমাত্র কৃষি খাতই সচল ছিল। ফলনও ভালো হয়েছিল। ফলে আমাদের দেশে খাদ্য সংকট তৈরি হয়নি। তাছাড়া সার্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে এই চারটি মন্ত্রণালয়ের যে বিনিয়োগ (বরাদ্দ) লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা গত পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সূত্র জানায়, গত জুন মাসে শেষ হয়ে যায় সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫ সাল পর্যন্ত) তৈরির কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমানে পরিকল্পনাটির খসড়া চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী নভেম্বর মাসে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ার আলোকে তৈরি করা জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ও গ্রামীণ উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ এ খাতের সঙ্গে জড়িত। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হচ্ছে একটি স্বাধীন অর্থনীতি। তবে বাংলাদেশ বর্তমানে কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সেবা খাতে অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করছে।
করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ খাদ্য সংকটে পড়েনি। খাদ্যে এ দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর বিপরীতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে পাঁচ বছরে (২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর) বরাদ্দের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক লাখ ১১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ছয় হাজার ৫৯০ কোটি টাকা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আগামী পাঁচ বছরে কৃষি খাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করোনা মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সেচ কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা, কৃষিজমি কমে যাওয়া এবং গোডাউনের অভাব, কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ না হওয়া। এগুলো ছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে আলাদা চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিকল্পনায় এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কৃষিকে শক্তিশালী করতে রয়েছে নানা পদক্ষেপ।
খবর সারাবেলা / ২৮ অক্টোবর ২০২০ / এমএম