নীলফামারীতে শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে ‘আলোর কণা’

নীলফামারীতে শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে ‘আলোর কণা ফ্রি পাঠদান কেন্দ্র’। জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে জলঢাকা সদরের দুন্দিবাড়ি এলাকায় পাঠশালাটি যাত্রা শুরু করে ২০১৫ সালের জানুয়ারীতে। ৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও সাড়ে চার বছরে এসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ২০০ জনে।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত দরিদ্র পরিবারের এসব শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছে জলঢাকা সরকারী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী এবং স্নাতক পর্যায়ের সাত শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানে কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকণ, হাতের সুন্দর লেখা, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়ে থাকে বিভিন্ন সময়ে। বিজয়ীদের দেয়া হয় পুরস্কারও। পালন করা হয় বিভিন্ন জাতীয় দিবস। টিনের দু’চালা বিশিষ্ট বাঁশের বেড়ায় ঢাকানো পাঠশালাটিতে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার এবং সৎ মানসিকতা প্রস্তুতিতে সততা স্টোর।
পাঠদানে নিয়োজিত জলঢাকা সরকারী ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী আতিকা আকতার বলেন, সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত পাঠদান করানো হয় এখানে। ঘরের ভিতরে চটে বসিয়ে পাঠদান করানো হয় শিক্ষার্থীদের। বাহিরেও পাঠদান করা হয় দলবদ্ধ ভাবে।

একই কলেজের ডিগ্রীতে অধ্যয়নরত আলোর কণার শিক্ষক লিপসি খাতুন বলেন, এখানে যারা আসে সবাই দরিদ্র অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রতিযোগীতার আয়োজন করে তাদের খাতা, কলম প্রদান করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে শুধু পাঠদান করাচ্ছি তা কিন্তু নয়। এ রফলে আমরাও উপকৃত হচ্ছি। আমাদেরও চর্চা হচ্ছে। ভবিষ্যতে চাকুরীর জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এখান থেকে।

‘আলোর কণা’ সুত্র জানায়, শুধু জলঢাকা শহরের দুন্দিবাড়ি ডাঙ্গাপাড়া এলাকাতেই নয়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে আরো দশটি ফ্রি পাঠদান কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি কেন্দ্রে অন্তত ১০০ জনকে পড়ানো হয়।

ফ্রি কেন্দ্রে শিক্ষা নিতে আসা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সাকিব হোসেন জানান, সকালে এখানে এসে পড়া শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাই। গোসল ও খাওয়া শেষে এরপর স্কুলে যাই। এখানে এসে পড়াশোনার প্রতি আরো আগ্রহ বেড়েছে আমার। প্রতিযোগীতায় অংশ নেই।

জলঢাকা ডিগ্রী কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ফুয়াদ হোসেন, হিরণ রায় এবং লিওন ইসলামের উদ্যোগে ২০১৫ সালে আলোর কণা ফ্রি পাঠদান কেন্দ্রটি চালু করা হয়। প্রধান উদ্যোক্তা ফুয়াদ হোসেন জানান, আমরা সাত ভাই বোন। বাবা ছোট একটি ব্যবসা করেন। অর্থাভাবে সবাই পড়াশোনা করতে পারেন নি। ২০১২ সালে যখন আমি এসএসসি পাস করি তখন এরকম একটি কেন্দ্র চালু করার প্রয়োজনীতা অনুভব করি। পরে ২০১৫সালে তিনবন্ধু মিলে এটি শুরু করি এবং এখন ভালো সাড়া পাচ্ছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল ভৌমিক জানান, কয়েকজন শিক্ষার্থী যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে ভালো। সেখানে বিনামূল্যে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। গোটা দেশে আলোর কণা একটি অনুকরণীয় কেন্দ্র হতে পারে। এজন্য সহযোগীতার হাত বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করি।

 

খবর সারাবেলা/ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ টি আই