নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করায় ২১ পয়েন্টে বসানো হবে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন
নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করায় দ্রুতই ক্ষতবিক্ষত হয় দেশের মহাসড়কগুলো। এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ২১ পয়েন্টে বসানো হবে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন (পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র)। এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১ হাজার ৬৩০ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছে। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আগামী মঙ্গলবার উত্থাপন করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। আর পুরো ব্যয়ই মেটানো হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন,‘গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে স্থাপন করা হবে এসব এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধের মাধ্যমে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ততা রোধ করে টেকসই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, গাজীপুর সদর, কেরানীগঞ্জ, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, বুড়িচং, ফেনী সদর, সাতকানীয়া, চট্টগ্রাম সদর, সীতাকু-, নবীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, রামপাল, সাতক্ষীরা সদর, দামুড়হদা, শিবগঞ্জ, হাকিমপুর, রৌমারী, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, শিবচর, কালিহাতী উপজেলাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রকল্প নেওয়ার যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, মহাসড়কে প্রস্তাবিত ২১টি স্থানে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধ করা যাবে। এতে নির্ধারিত আয়ুষ্কালের আগেই সড়কগুলোর ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে বলে প্রকল্প এলাকাগুলো নির্বাচন করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের আওতায় জাতীয়, আঞ্চলিক এবং জেলা সড়কসহ সর্বমোট ২১ হাজার ৩০২ দশমিক ৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এগুলোর ডিজাইন প্রণয়নে আরএইচডি পেভমেন্ট ডিজাইন গাইড এবং দ্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব স্টেট হাইওয়ে ট্রান্সপোর্ট অফিসিয়ালস (এএএসএইচটিও) ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুসরণ করা হয়। সাধারণত ১০ থেকে ২০ বছর আয়ুষ্কাল ধরে কমুলেটিভ ইকুইভলেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এক্সেল লোড (সিইএসএএল) হিসাব করে ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়।
বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, ২০০৪ সালের ৫ মে অনুযায়ী; দুই চাকাবিশিষ্ট ফ্রন্ট এক্সেল এবং চার চাকাবিশিষ্ট রেয়ার এক্সেল (ছয় চাকাবিশিষ্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ওই সড়কগুলোয় ২০ থেকে ৩০ টন ওজনের ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। ফলে নির্ধারিত আয়ুষ্কালের অনেক আগেই সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন বহনকারী যানবাহনগুলো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই যান চলাচল নিরাপদ এবং সড়কগুলো মজবুত ও টেকসই রাখার উদ্দেশ্যে ওয়েবনির্ভর মনিটরিং সিস্টেম এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন জরুরি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়কের ২১টি স্থানে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৮৮ লাখ ২১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত এ উন্নয়ন প্রকল্পের (ডিপিপি) ওপর চলতি বছরের মার্চে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে প্রকল্পের আওতায় ২১টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৩০ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা। বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন। প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছেÑ ওয়ে ইন মেশনসহ স্কেল স্থাপন ও কমিশনিং; স্ট্যাটিক ওয়ে ব্রিজ স্কেল স্থাপন ও কমিশনিং; ভূমি অধিগ্রহণ; সড়ক বাঁধ, পার্কিং এরিয়া, রিজিড পেভমেন্ট, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, রোড বেরিয়ার, মিডিয়ান, আরসিসি প্রেন, আরসিসি বক্স কালভার্ট, দুইতলাবিশিষ্ট ভবন, কন্ট্রোল রুম এবং বুথ নির্মাণ ইত্যাদি।
খবর সারাবেলা। ৩১ আগষ্ট ২০১৯। টি আই