নতুন বছরে ঘরের নতুন সাজ

নতুন বছরের অন্দর না হয় একটু নতুন করেই সাজুক। গৃহের প্রতিটি কোণে নতুনত্বের ছোঁয়া থাকুক। নিজের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘরেরও পরিবর্তন হোক কারণ দিনশেষে সবচেয়ে শান্তির এবং প্রিয় জায়গা হচ্ছে ঘর। যে ঘরে আমরা আমাদের সুখ দুঃখ শান্তি অবসাদ ক্লান্তি সবকিছু এক ভরসার নামই হচ্ছে ঘর বা গৃহ। তাই নতুন বছর উপলক্ষে টুকটাক পরিবর্তন আনাই যায়। এছাড়াও নতুন যে কোন কিছুই মনকে অনেক উৎফুল্ল রাখে।

নতুনভাবে অন্দর বা গৃহ কে সাজানোর নানান ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। তবে এর মানে এই নয় নতুনভাবে অন্দর বা গৃহ কে সাজানোর জন্য সবকিছুতেই পরিবর্তন আনতে হবে। ঘরে থাকা জিনিসকে নতুন ভাবে রূপ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন থিমে ঘরকে সাজানো যেতে পারে। অন্যদিকে এক একটি ঘরকে একেক ভাবে সাজানো যেতে পারে যেমন – বোহিমিয়ান থেকে শুরু করে মর্ডান, বাঙালিয়ানা থেকে পুরনো আভিজাতময় শৈল্পিক রূপ দেওয়া যেতে পারে। আপনি কিভাবে আপনার অন্দর বা গৃহ সাজাবেন তা নির্ভর করবে আপনার পছন্দ এবং ভালোলাগার ওপর।

বোহেমিয়ান অন্দর
বোহেমিয়ান অন্দর সাজানো অবশ্যই অন্য দশটা অন্দর সাজানোর থেকে আলাদা। এখানে থাকবে অনেক ভিন্নতা। একটু কঠিন কাজও, তবে এর জন্য দরকার একটা স্থির শৈল্পিক চিন্তাভাবনা। বোহেমিয়ার অর্থ এলোমেলো বা ভবঘুরে। তাই ঘরের মধ্যে যদি এলোমেলো ভবঘুরে বিষয়টাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় তাহলে অবশ্যই অনেকগুলো দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বোহেমিয়ান থিমে অন্দর সাজানোর জন্য সর্বপ্রথম নানান ধরনের রং এবং নানান ধরনের আকারের জিনিস এবং আনকমন অনেক টুলস রাখতে হবে। যেসব টুলসগুলো সাধারণ ঘর সাজানোর টুলস এর থেকে একটু ভিন্ন। তাহলে বোহেমিয়ান অন্দর সাজানো সহজ হবে।

বোহেমিয়ার অন্দরের জন্য যে বিষয়টা সর্বপ্রথম মাথায় রাখতে হবে তা হল রং। বোহেমিয়ার অন্দর সাজানো ক্ষেত্রে রং যত উজ্জ্বল ও গাড় হবে বোহেমিয়ান বিষয়টা তত বেশি ফুটে উঠবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কমলা, হলুদ, গাঢ় নীল, টিয়া,লাল, গাঢ় বেগুনি এই ধরনের রং গুলো এই ধরনের রং গুলো দিয়েই নানান থিম পরিকল্পনা করতে হবে।

বোহেমিয়ান অন্দর সাজানোর জন্য লন্ঠন, মোমবাতি, টেলিফোন, রেডিও, নানান ধরনের ছোটখাট বাদ্যযন্ত্র এই ধরনের বিষয়গুলো দিয়ে বোহেমিয়ান থিম তৈরি করা যাবে। একটা ছোট টি টেবিলে একটু প্যাচওয়ার্ক ধরনের কাপড়ের ম্যাট বিছিয়ে সেখানে কয়েকটা বই এবং এই ধরনের টুলসগুলো একসাথে রাখা যেতে পারে।

বোহেমিয়ান থিমের অন্যতম দুইটি জিনিস হল নানান ধরনের কুশন ও মোড়া। কারুকার্য করা আয়না বসানো কাপড়ে গোল্ডেন সুতার কাজ করা মোড়াগুলো বর্তমান খুবই জনপ্রিয় এবং সম্পূর্ণ মোড়াটাই তৈরি হয়েছে বোহেমিয়ান বিষয়টি মাথায় রেখে।বিভিন্ন কাজ করা রঙিন ডিজাইনের আয়না বোহেমিয়ান অন্দর সাজানোর জন্য অন্যতম একটি জিনিস।

মর্ডান অন্দর
মর্ডান অন্দর বলতেই বর্তমান সময়ে খুব মিনিমাল আসবাব দিয়ে অন্দর সজ্জা করা হবে। খুব অল্প স্বল্প আসবাব থাকবে এবং ডিজাইনগুলোও থাকবে একদম কম মূলত মর্ডান ডিজাইনগুলো খুব প্লেন ক্যাটাগরির হয়ে থাকে এছাড়াও মডার্ন অন্দরের ক্ষেত্রে খুব হালকা রং ব্যবহার করা হয় আর হালকা রঙের কোন কিছু যদি ঘরে থাকে তাহলে ঘর আয়তনেও বেশ বড় মনে হয়। তাই মর্ডান ধরনের অন্ধ শয্যায় কিছু টিপস ফলো করা যাক

মর্ডান অন্দরের ক্ষেত্রে দেয়ালের রংটা সাদা অথবা থাকলেই বেশ সুন্দর লাগবে পর্দা গুলো পাতলা কাপড়ের হালকা রঙের হলে মানানসই

মর্ডান অন্তরের ক্ষেত্রে লাইট কিংবা ল্যাম্পের ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। ওয়ার্ম সেডের কোন ল্যাম্প যদি ঘরের একটি কর্নারে রাখা যায় তাহলে অনেক সুন্দর লাগবে।

ঘরের কোন একটি কর্নারে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন এছাড়াও জানালার দিকে ঝুলন্ত ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন সবুজ রং মডার্ন অন্দরের জন্য অন্যতম একটি রং।

বিছানার চাদর কিংবা কুশন কভারের রং গুলো একটু গাঢ় ব্যবহার করার চেষ্টা করুন তাহলে ঘরের রং এবং আসবাবপত্রের রং এর সাথে সামঞ্জস্য থাকবে।

দেয়ালে গোল্ডেন ফ্রেমের কোন ঘড়ি বা কোন বড় আয়না রাখতে পারেন তাহলে সম্পূর্ণ ঘরটিতে বেশ মর্ডান ভিন্টেজ ভাত আসবে।

পুরনো রূপে অন্দর
আধুনিক সময়ে এখন সবাই আধুনিকভাবে নিজের ঘরকে সুসজ্জিত করতে চায়। সবাই চায় নতুন কিছু দিয়ে নতুনভাবে নতুন রূপে ঘর সাজাতে। সেজন্য পরিবর্তন করতে হয় পুরনো জিনিসগুলো। তবে আপনি যদি নান্দনিকতার সঙ্গে সে পুরনো জিনিসগুলোকে একটু পরিকল্পনা আর সৃজনশীলভাবে নতুন করে রূপ দিতে পারেন, তবে তার চেয়ে সুন্দর অন্য কিছু হবে না হয়তো।

আগের দিনের ঘরে কাঠের সিন্দুকের ব্যবস্থা থাকতো। সেখানে অর্থ, দলিল, টাকা,অনেক সময় নারীদের শাড়িও থাকতো। তবে এখন বিষয়টা ভিন্ন। এখন আর কারও ঘরে দেখা যায় না। এটাকে ড্রয়িং রুমের টেবিল হিসেবেও রূপ দেওয়া যায়। একটা নান্দনিকতার ছোঁয়া থাকবে এবং পুরনো জিনিসের ব্যবহারও বজায় থাকবে।

পুরনো আদলের যে শোকেসগুলো আছে, সেগুলোকে চাইলেই একটু নতুনভাবে সাজানো যায়। পুরনো শো-কেসটাকে ভালো করে বার্নিশ করে নিতে হবে। এরপর শোকেসটাকে একটু নতুন রূপ দেওয়ার জন্য কোনো এক্সট্রা ড্রয়ার কিংবা কেবিনেট বানিয়ে নিতে পারেন। শোকেসে শুধু তথাকথিত বাসন না রেখে সুন্দর করে বই বিভিন্ন ধরনের শোপিস, ফুলদানি, ল্যাম্প দিয়ে সাজিয়ে নিলে ঘরে নান্দনিকতার ছোঁয়া লাগবে।

আলনা জিনিসটার চল এখন আর নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। প্রতিদিনের ব্যবহৃত কাপড়ের জন্য এখন ঘরে ব্যবহার হয় প্লাস্টিকের রেক। তবে আলনার কাঠ ব্যবহার করে আপনি চাইলে একটি নিত্য ব্যবহারের র‌্যাক বানিয়ে তাতে রঙ করে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিতি এঁকে ঘরের এক সাইডে সাজিয়ে রাখতে পারেন। পুরনো জিনিস এই ঘর হয়ে যাবে নতুন।

বাঙালিয়ানা অন্দর
ঘরকে বাঙালিয়ানা বা দেশীয় শিল্পে দেশীয় রূপে দেশীয় সংস্কৃতিতে সাজিয়ে রাখা যায় তাহলে কতই না ভালো লাগবে। প্রতিটা মানুষের গৃহের সাজাই তার রুচির এবং আভিজাত্যের পরিচয় দেয়। বাঙালিয়ানা বা দেশীয় সংস্কৃতিতে গৃহ সাজালে দেশীয় ভাবের পাশাপাশি আভিজাত্য, শৈল্পিকতা ও নান্দনিকতা ফুটে উঠবে।

গৃহে যদি বাঙালিয়ানা ছোঁয়া রাখতে হয় প্রথমেই দেশীও পণ্যের দিকে নজর দিতে হবে যেমন বেত – বাঁশ, মাটির জিনিসপত্র, স্টিলের জিনিস পত্র এছাড়াও নানান দেশীও পণ্যের দিয়ে।

যেকোনো একটি ঘর আমরা সম্পূর্ণ বেত – বাঁশের আসবাবপত্র দিয়ে সাজাতে পারেন। ঘরের কোন একটি দিকে বেতের আয়না, বেতের ঘড়ি, বেতের বুকশেলফ রাখতে পারি।

বাঙালিয়ানা অন্দর সজ্জার ক্ষেত্রে ঘরে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করা উচিত সেটা হোক পর্দা অথবা দেয়ালের রং অথবা বিছানার চাদর।

বাঙালিয়ানা অন্দরের ক্ষেত্রে যে কোন একটি দেয়ালে নানান ধরনের চিত্র যেমন রিকশা চিত্র দেশীয় ঐতিহ্য এই ধরনের চিত্র আর্ট করা যেতে পারে।

এখানে যতগুলো অন্দর সজ্জার কথা রয়েছে আপনি আপনার পছন্দমত যে কোন একটি দিয়েও প্রত্যেকটি ঘর সাজাতে পারেন যেভাবেই সাজান না কেন অন্দর হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষের শৈল্পিক রুচির পরিচয় দেয়।

ছবি: রিনিশ ডিআইওয়াই নেস্ট বাই ফাহমিদা নিশি

খবর সারাবেলা / ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ / এমএম