দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো পার হতে হবে
মাথায় দুধভর্তি কলস এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাতে আরেকটা ঘটি (কেটলি) নিয়ে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হেঁটে শহরে আসেন গোয়াল ফজলুল হক। শহরতলির শহীদনগর আসার পরপরই তার বুকের ভেতর শুরু হয় ধুকধুক শব্দ। কারণ দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো পার হতে হবে তাকে। নড়বড়ে সাঁকো পার হতে গিয়ে তিনি জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে এই সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছি। নতুন সেতু কবে চালু হবে জানি না। তবে বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে পার হতে গিয়ে সাঁকো নড়ে, বুক কাঁপে।
সরেজমিন দেখা গেছে, দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পরও সম্পন্ন হয়নি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদনগর ব্রিজের নির্মাণকাজ। ৯ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত আড়াই বছরে অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সময়মতো ব্রিজ না হওয়ায় নিত্যদিনের ভোগান্তিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। আগামী ছয় মাসেও ব্রিজের কাজ শেষ হবে না বলে আশঙ্কা তাদের। তবে আগামী দুই মাসেই ব্রিজের কাজ শেষ হবে বলে দাবি করেছে ঠিকাদাররা।
শহীদনগর ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়, ব্রিজের কাঠামো দাঁড়ালেও এখনো বাকি রয়ে গেছে আনুষঙ্গিক অনেক কাজ। ফলে অস্থায়ী নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পার হতে হচ্ছে এলাকার হাজারো মানুষের। ব্রিজের অর্ধেকাংশের ঢালাই হলেও বাকি অংশের ঢালাই এবং পাইলিং কাজে ব্যবহৃত বাঁশ ও কাঠ সরানো হয়নি। অন্য দিকে ব্রিজের দুই পাশের ওঠার ঢালুপথের কোনো কাজই ধরা হয়নি। এ ছাড়া দুই পাশেই ৩০০ ফুটের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজও বাকি রয়েছে।
জানা যায়, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদনগরবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৭ সালে ৯ মার্চ ব্রিজটি পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। পাশাপাশি দুটি ব্রিজ, আলামিননগর ব্রিজ ও শহীদনগর ব্রিজের পুনর্নির্মাণের জন্য ১৩ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয় নাসিক। ঠিকাদার কোম্পানিকে শহিদনগর ব্রিজটির পুনর্নির্মাণের সময় দেয়া হয় ৯ মাস। সে অনুযায়ী ভিত্তিপ্রস্তরের ছয় মাস আগেই ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয় এবং নগরবাসীর যাতায়াতের জন্য একটি অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেয়া হয়। এদিকে ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায়নি ব্রিজটির। বর্ষার কারণে ব্রিজের কাজ করা যায়নি এমন অজুহাতে ব্রিজের নির্মাণ মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর পরও ঢিলেঢালা ভাবেই চলতে থাকে ব্রিজ নির্মাণ কাজ। পরবর্তীতে এক বছরের মেয়াদকাল পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন বলেন, আমরা এলাকাসীর দুর্ভোগের কথা ভেবেই কাজ করেছি। যখনই সাঁকোতে সমস্যা হয়েছে এলাকাবাসী বলার আগে তা ঠিক করিয়েছি। বিভিন্ন কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মাণে বিলম্ব করেছে। সবকিছু বিবেচনা করে তাদের দুই দফায় সময় দেয়া হয়। কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মো: জাফর বলেন, বিভিন্ন কারণে ব্রিজের নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ও দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কাজে সময় তো লাগবেই। আর ভালো কিছুর জন্য কিছুটা ভোগান্তি তো থাকবেই।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই দফায় সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু আর সময় দেয়া হবে না। দ্বিতীয় দফার মেয়াদও অতিক্রম করেছে এখন তাদের জরিমানা দিয়ে কাজ শেষ করতে হবে। জরিমানা বলতে এরপর থেকে ব্রিজের কাজে যে লেবার ও আনুষঙ্গিক খরচ হবে তা কোম্পানি দেবে বলে জানান প্রকৌশলী।
খবর সারাবেলা / ২৯ আগস্ট ২০১৯ / টি আই