দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মানুষ চরম দুর্ভোগে
পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। বন্যার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফের অবনতির পথে বন্যা পরিস্থিতি। অনেক এলাকায় অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তায় ২৭ জেলার জন্য এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চাল, ৮৭ লাখ টাকা ও ১৪ হাজার অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গো খাদ্যের জন্য ৫৪ লাখ এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রূপ নেয়ায় নিম্নাঞ্চলের বানভাসি মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের অনুক‚লে এই বরাদ্দ দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ল²ীপুর, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে এই সহায়তা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বরাদ্দ করা ত্রাণ (চাল ও নগদ টাকা) শুধুমাত্র আপদকালীন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া অন্য কোনো কাজে এ বরাদ্দ বিতরণ করা যাবে না। মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে এ বরাদ্দ বিতরণ করতে হবে। নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ৭ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৮টি পরিবারের ৩০ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এলাকায় বন্যার পানি দিন দিন বাড়ছে। পদ্মার পানি বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। গোবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে আবারো জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রূপ নেয়ায় নি¤²াঞ্চলের বানভাসি মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পানি উš²য়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, দুইদিন ধরে আবারো যমুনায় পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এতে করে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখনো ছয়টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫০ গ্রামের ৩ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য ২৬৭ মেট্রিক টন চাল, ৩৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ছাড়াও শিশুখাদ্য ও গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
খবর সারাবেলা / ২৫ জুলাই ২০২০ / এমএম