তুতুলের চড়ুই বাড়ি
রঙিন ঘুড়ি ওড়ে আকাশে। বাড়ির ছাদে ছাদে সবাই ঘুড়ি ওড়ায়। তুতুলের খুব ইচ্ছে হয় পাখির মতো ঘুড়ির মতো উড়তে। ওর তো পাখা নেই। তাই মনের পাখায় ওড়ে। উড়তে উড়তে গ্রাম, শহর, পাহাড়, নদী দেখা। দেখতে দেখতে তেপান্তরের মাঠে ঘুরে বেড়ায়। মাঠের কোণে ওই যে আকাশ সমান তালগাছ। গাছের পাতার সঙ্গে অনেক অনেক বাবুইপাখির বাসা ঝুলছে। শিল্পীপাখি বাবুই। ওদের মতো এত সুন্দর বাসা কোনো পাখি বানাতে পারে না
চড়–ইয়ের চিড়িপ চিড়িপ গানে তুতুলের ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে জানালায় তাকায় সে। সোনারোদে ঝিকমিক করছে। মুঠিমুঠি চাল এনে বারান্দায় ছিটিয়ে দেয় তুতুল। এমন করে সকাল বিকাল প্রতিদিন খাবার দেয়।
ভেন্টিলেটরের ভেতরে খড়কুটো এনে বাসা বানিয়েছে চড়–ইয়েরা। ওদের কোনো বিরাম নেই। সবসময় ফুড়ুত ফাড়ুত উড়ে এসে বাসায় ঢোকে আর বেরিয়ে যায়। স্কুল থেকে এসে তুতুল পাখিগুলোর খোঁজ নেয়। একদিন দেখল বারান্দায় ছোট্ট আরো দুটি চড়ুই কেবল উড়তে শিখেছে। ছোট ছোট পায়ে যেন এক্কা-দোক্কা খেলছে। পাখা নাড়াচ্ছে আর চিড়িপ চিড়িপ করে ডাকছে। মা পাখিটা মুখে চাল তুলে দিচ্ছে। তুতুল তন্ময় হয়ে দেখছে এসব।
একদিন ছোট্ট চড়ুই দুটি উড়াল দিয়ে পাশের বাড়ির ছাদে গেল। কয়েকটি কাক ওদের তাড়া করল। মা পাখিটার কিচিরমিচির ডাকে ওরা নিজেদের বাসায় চলে এলো। তুতুল একটি ইটের টুকরো ছুড়ে মারল। কাকেরা চলে গেল কা-কা করে।তুতুলের বাড়ির কাছেই একটা খেলার মাঠ। বিকেলে সবাই মাঠে খেলতে যায়। মাঠের পাশে নারিকেল, সুপারি, তাল, মেহগনি, আম, কাঁঠালের গাছ। নানা রকম পাখির বাস সেখানে। শালিক, টিয়ে, ফিঙে, কাক, আরো অনেক পাখি। বারান্দায় বসেই মাঠ দেখা যায়। আকাশ দেখা যায়। আকাশে চিল উড়ে। মেঘেরা উড়ে। কখনও ঝাঁক বেঁধে শত শত কবুতর ওড়াওড়া খেলে।
রঙিন ঘুড়ি ওড়ে আকাশে। বাড়ির ছাদে ছাদে সবাই ঘুড়ি উড়ায়। তুতুলের খুব ইচ্ছে হয় পাখির মতো ঘুড়ির মতো উড়তে। ওর তো পাখা নেই। তাই মনের পাখায় ওড়ে। উড়তে উড়তে গ্রাম, শহর, পাহাড়, নদী দেখা। দেখতে দেখতে তেপান্তরের মাঠে ঘুরে বেড়ায়। মাঠের কোণে ওই যে আকাশ সমান তালগাছ। গাছের পাতার সঙ্গে অনেক অনেক বাবুইপাখির বাসা ঝুলছে। শিল্পীপাখি বাবুই। ওদের মতো এত সুন্দর বাসা কোনো পাখি বানাতে পারে না।
বাবুই আর চড়ুই পাখির মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব। ওরা একে অপরের বাসায় বেড়াতে আসে। একদিন চড়ুই পাখি বাবুই পাখিকে দাওয়াত দিল বিকেলে। খাবার আয়োজন করল ধুমধাম করে। কয়েকটি ফড়িং, ছোট ছোট পোকা আর তুতুলের দেয়া খাবার থেকে জমানো চাল, ধানকাউন আর সরিষা সাজিয়ে রাখল। পাশের বাড়ির ছাদ থেকে নানান ফুলের পাপড়িও এনে রাখল। বাবুই এত খাবারের আয়োজন দেখে খুব খুশি। চড়ুই আর বাবুই খেতে খেতে গল্পে মেতে উঠল। যাবার সময় বন্ধু বাবুই চড়–ইকে একটি জোনাকি উপহার দিল। এবং চড়ুইয়ের বাসার কোণে ওটাকে নরম মাটি দিয়ে আটকিয়ে রাখল। চড়–ই পাখিদের দাওয়াত দিয়ে চলে গেল বাবুই পাখি।
সন্ধ্যা হলো। চড়ুইয়ের বাসায় মিটি মিটি আলো জ্বলে আর নেভে। চড়ুইয়ের বাচ্চারা খুব খুশি।তুতুল বারান্দায় গেল। এ সময় বিদ্যুৎ নেই তাই। দখিনা বাতাসে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। আকাশে তারা জ্বলছে। অগণিত তারা। হঠাৎ চোখ পড়ল চড়ুইয়ের বাসার দিকে। দেখল চড়ইয়ের বাচ্চারা জোনাকি আলোয় পড়ছে-আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।
খবর সারাবেলা / ০৯ জুলাই ২০২০ / এমএম