তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে রক্ষার আহ্বান

টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও মান উন্নয়ন বাড়াতে যখন সোচ্চার হই, ঠিক তখন দেখা যায় ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তথ্য বলছে প্রযুক্তির ব্যবহারকারী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ইন্টারনেটের অপব্যবহার করছে।

শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক লোটাস জামিল স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানান। এতে ‘বিশ্ব যুব দিবস’ উপলক্ষে তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে গ্রাহক অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেখানে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সবাইকে প্রযুক্তির ব্যবহারের আহ্বান জানাচ্ছি, ঠিক এর বিপরীতমুখী অবস্থায় রয়েছে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। দেশে এখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় চার কোটি ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহারকারী। বিভিন্ন জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ইন্টারনেটের অপব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজ পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে দেখে যাচ্ছে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই। শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক যারা এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তীর্ণ হতে পারেনি পরীক্ষায়। এমন ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে আসক্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা মহামারীর মধ্যে দুই বছর শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছি। অভিভাবকরা তার সন্তানকে হ্যান্ডসেট, ল্যাপটপ বা ট্যাব কিনে দিতে বাধ্য হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কোমলমতি তরুণ প্রজন্ম পর্নোগ্রাফি, টিকটক, নাইকি, ফ্রী ফায়ার পাবজি গেম, এমনকি অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। টিকটকে তরুণ প্রজন্মের মৃত্যুর সংবাদ আসছে। সেই সাথে ফ্রী ফায়ার পাবজি গেম কে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠা এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বাবা মার সাথে অসৎ অসজজন্যমূলক আচরণ, এমনকি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করেছি।

যদিও অনেক তরুণ প্রজন্মই প্রযুক্তির সুফল ভোগ করে আজ অর্থ রোজগারের পাশাপাশি বিশ্বে ও সুনাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু অপব্যবহারকারীর সংখ্যাটা এতটাই বেশি যে সুফল ভোগকারীদের সংবাদগুলিও ধামাচাপা পড়ে গেছে। দ্রুত আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ করবো আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রতিনিয়ত উদ্যোক্তা তৈরির বিশাল বিশাল কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তাদের কোন কার্যক্রম নেই। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বা অপারেটরদের পক্ষ থেকেও কোন অগ্রণী ভূমিকা নেই। এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও প্রযুক্তি উপদেষ্টারও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে রক্ষা পেতে পারি সেই নির্দেশনা প্রদান করবেন।

খবর সারাবেলা / ১৪ আগস্ট ২০২২ / এমএম