‘কারা অভ্যন্তরে নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র’
৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়ের পঞ্চগড় কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা কোন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নয় বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছে বিচারিক তদন্ত কমিটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পলাশ গত ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা বা তার কাছাকাছি সময়ে কারাগারের অভ্যন্তরে কারা হাসপাতাল ভবনের নিচ তলার ওয়ার্ডের বাইরের বাথরুমে নিজেই তার পরিহিত ট্রাউজারে গ্যাস লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরবর্তীতে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তার শরীরের নিচের দিকে বেশিরভাগ অংশসহ দুই হাত কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এদিকে, এই ঘটনার তদন্ত করতে যেয়ে ওই কারাগারের ভেতরে নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান। এতে কারাগারের ভেতরে গ্যাস লাইটারের অবাধ ক্রয়-বিক্রয়, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা না থাকা, কারা তত্ত্বাবধায়ক ও কারা হাসপাতালে নিয়মিত মেডিক্যাল অফিসার না থাকা, হাসপাতালে ডিপ্লোমা নার্সের দায়িত্ব প্রদান ও খুনের মামলার যাবজ্জীবন আসামিকে দিয়ে সার্জিক্যাল বিভাগের দায়িত্ব পালন করানোর দিকগুলো উঠে এসেছে।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে হাইকোর্ট ওই কারাগারের নিরাপত্তা ও কারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজন্সকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার উপস্থিত ছিলেন। বিচারিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ এই মহান বার্তাকে মূলমন্ত্র হিসেবে ধারণ করে কারা অধিদপ্তর এগিয়ে চলছে। তবুও কারা ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু ত্রুটি এবং অপর্যাপ্ততা চোখে পড়ার মত। অনেক সময় এই ধরনের ত্রুটি এবং অপর্যাপ্ততার কারণে সংশোধনমূলক কারা ব্যবস্থা তার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে। বন্দিদেরকে তাই মানুষ হিসেবে গণ্য করে তাদেরকে সত্যিকার অর্থে নিরাপদ রাখতে ও আলোর পথ দেখাতে প্রয়োজন সুনিদ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, কার্যকর উদ্যোগ এবং আন্তরিকতা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কোন বন্দি অসুস্থ হলে কিংবা আহত হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। কিন্তু পলাশের গায়ে আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পর তার চিকিৎসা শুরু হয়। একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিতে বিলম্ব হওয়া অমানবিক এবং এই ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। এছাড়া কারাগারে কেউ অসুস্থ হলে বিষয়টি অতি দ্রুততার সঙ্গে পরিবারকে জানাতে হবে। কিন্তু পলাশের ঘটনাটি তার পরিবারকে জানানো হয়নি। শুধু পলাশ নয়, সব বন্দি স্থানান্তর কিংবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বা তথ্যপ্রদানের প্রক্রিয়া উল্লিখিত আইনের অধীনে যথাযথভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান হয়। এটি অবশ্যই বন্দিদের নিরাপদ হেফাজত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অনুকূল নয়।
শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, পলাশের গায়ে আগুন ধরার পর যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া যেত হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব ছিল। আমরা বলব না বাঁচত, কিন্ত চেষ্টা করলে হয়তো বাঁচানো যেত।
খবর সারাবেলা / ২২ আগস্ট ২০১৯ / টি আই