করোনা হলে নাকের ঘ্রাণ হারায় কেন
মানুষ যে পাঁচটি বিশেষ অনুভূতি নিয়ে জন্মায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা। আমরা নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিতে পারি বা গন্ধ পাই অলফেক্টরি নামক স্নায়ুর মাধ্যমে।কোনো কোনো সময় মানুষ এই ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হলে এমনটি হয়ে থাকে।
কেন ঘ্রাণশক্তি হারায়
শ্বাস নেয়ার সময় প্রবেশ করা বাতাস অলফেক্টরি স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানে। তখনই ঘ্রাণ বা গন্ধের উদ্রেক হয়। নাকের দুদিকেই স্নায়ুতন্ত্র সমানভাবে থাকে, যাকে বলে গন্ধ নেয়ার চিহ্নিত এলাকা।
এই স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভ সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। কোনো কারণে এই নার্ভটি অকার্যকর হয়ে গেলে আমরা ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই না।আর ঘ্রাণ না পেলে আমাদের জিহ্বার টেস্ট বাড যা স্বাদ পেতে সাহায্য করে, তাও অকার্যকর হয়ে হয়ে পড়ে। ফলে একইসঙ্গে নাকে ঘ্রাণ না পেলে মুখের স্বাদও পাই না।
নাকের ঘ্রাণ হারানোর আরও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে-সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, অ্যালার্জিজনিত নাকের হাচিজনিত সমস্যা, সাইনোসাইটিস, নাকের হাড় বাঁকা, নাকের পলিপ, নাকের বিভিন্ন টিউমার, মস্তিষ্কের সমস্যা, বার্ধক্যজনিত সমস্য, পারকিনসন ডিজিজ, ব্রেইন টিউমার ও মাথায় আঘাত পেলেও এমনটি হতে পারে।
এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রেডিওথেরাপি, জন্মগত সমস্যা, মানসিক রোগ ও কারো ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের কারণে ঘ্রাণ হারাতে পারে।
আর একটানা দীর্ঘদিন ধরে নাকের ড্রপ (এন্টাজল/রাইনোজল/আফরিন) চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করলেও ঘ্রাণশক্তি কমতে পারে।
করোনার সঙ্গে ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়ার সম্পর্ক
করোনাভাইরাসের একটি অন্যতম প্রবেশপথ হচ্ছে নাক। ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির নাক দিয়ে প্রবেশ করে নাকের ভেতরে ওপরের দিকে পার্শ্ব দেয়াল বা নাকের ছাদে গন্ধ নির্ণয়ের জন্য যে সেনসিটিভ নার্ভ রিসিপ্টর রয়েছে সেখানে প্রাথমিকভাবে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। তখন ভাইরাস এই বিশেষ অলফ্যাক্টরি স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, নাকের
ভেতরে শ্বাসের সঙ্গে নেয়া বাতাস বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ঘ্রাণশক্তি হারান।কয়েকদিন আগে জ্বর হয়ে ভালো হয়েছে, কিন্তু এখনও নাকের গন্ধ পাচ্ছেন না সেক্ষেত্রে অবশ্যই করোনার টেস্ট করা উচিত।
লেখক: ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী
বিসিএস (স্বাস্থ্য),
নাক-কান-গলা বিভাগ,
বিএসএমএমইউ(প্রেষণে), ঢাকা।
খবর সারাবেলা / ১৬ আগস্ট ২০২০ / এমএম