করোনাকালে শিশুর পরিচর্যা

বড়রা আমরা সবই বুঝি, সবই বলি কিন্তু ছোটরা বিশেষ করে যারা কিছু বলতে পারে না, শুধু কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়, এ মহামারীর সময়টাতে তাদের পরিচর্যা অনস্বীকার্য হয়ে পড়েছে।

বাজার থেকে বড়দের মাস্ক, ফেসশিল্ড কিনছেন কিন্তু ছোটদের কথা একটু ভেবেছেন? বড়দের থেকেও ছোটদের নিয়ে এখন বেশি করে ভাবার সময় এসেছে। তাই করোনাকালে প্রাথমিকভাবে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে- চলুন সেগুলো একটু জেনে নিই।

ঘরে বসে যত্ন নিন

এ দুঃসময়ে নবজাতকের জন্মের পর থেকেই ঘরে বসে যত্ন নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা বাইরে শিশুকে যতটা কম নেয়া যায় ততটাই ভালো। অনেকে আবার জন্মের পরপরই শিশুকে গৃহবন্দি করে ফেলেন।

দরজা-জানালা বন্ধ করে আবদ্ধ ঘরে মাসের পর মাস কাটান যা শিশুর জন্য কোনোক্রমেই আশানুরূপ নয়। নবজাতকের চর্মরোগের যেহেতু একটা বিষয় রয়েছে সেহেতু ঘরের মধ্যে দিনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করার সুযোগ করে দিন। এতে বদ্ধঘরে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তা মরে যায়। প্রতিদিন ভোরের সূর্যের প্রথম আলো শিশুকে লাগানোর ব্যবস্থা করুন।

এই রোদ শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চর্মরোগ থেকে রেহাই দেয়। বাচ্চার বাহ্যিক সুস্থতায় এর বিকল্প নেই। নবজাতকের নরম কোমল ছোট হাত-পা ধরে একটু একটু নাড়াচাড়া করুন। দেহে নিয়মিত তেল মালিশ করুন ও গোসল করান। দেখবেন শিশুর শরীরের ব্যায়ামকার্য সম্পন্ন হচ্ছে এবং ছোট ছোট সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাচ্ছে। রাতে নিস্তব্ধ কক্ষ, স্বল্প আলোর বাতি, ক্ষেত্রবিশেষে সুমধুর যন্ত্রধ্বনি শিশুর ঘুমে ভূমিকা রাখতে পারে। মনে রাখবেন, কথায় কথায় ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনা আর শিশুকে খাইয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

যে শিশুরা একটু বড় হয়েছে তাদের সুষম খাদ্য প্রয়োজন। খাবারের পাশাপাশি করোনা সম্পর্কে আতঙ্ক না দেয়া, আশার কথা বলা, গল্পে গল্পে খেলা, বই পড়াসহ নানা কাজে উৎসাহ দেয়া হতে পারে মজবুত কর্মপরিকল্পনা।

চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন

সব চিকিৎসা ঘরে বসে হয় না। শিশু বিশেষজ্ঞরাই বোঝেন শিশুর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা। তাই, আপনার শিশুকে ভালো করে লক্ষ করুন। তার কান্নার ধরন পরখ করুন। বাহ্যিক অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করুন।

যদি স্বাভাবিক মনে না হয়, ফোনে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এখন অনলাইনে অনেক বিশেষজ্ঞ এই সেবা দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এটি নিশ্চিত যে, শিশুর প্রতি আপনার ধারণামূলক চিহ্নিত রোগ এবং দোকান থেকে আনা ওষুধ যে কোনো সময় যে কোনো মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে। কোনো চিন্তা না করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন, ভালো ফল পাবেন।

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুন

করোনার এ সময়টাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুন। সামাজিক দূরত্ব বলতে পরিবারের সদস্যদের দূরত্ব নয়, বরং অন্য স্থান থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয়দের থেকে কিছুদিন দূরত্ব মেনে চলুন আপনার ও বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য।

তাদের সবকিছু বুঝিয়ে বলুন। বর্তমান রোগ সম্পর্কে জানান। সবার ভালো থাকার উপায়গুলো আলোচনা করুন, দেখবেন তারাও আস্তে আস্তে বুঝে যাবে এবং অন্যকে শিখাবে। বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও যেতে হলে ৬ ফুট দূরত্বে থাকুন। জনসমাগমমূলক স্থানগুলোতে শিশুকে না নেয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত। ঘরে থেকে থেকে শিশুরা যদি অস্থির হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে খোলা জায়গায় যেখানে মানুষের কোলাহল নেই সেখানে ঘুরিয়ে আনতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকেই ভ্রমণস্থান, বাহন, খাবার-দাবার, পরিবেশ-পরিস্থিতি নিশ্চিত করে নিতে হবে।

বুকের দুধ খাওয়ান

যেহেতু ছোট বাচ্চারা কথা বলতে পারে না সেহেতু যে কোনো সমস্যায় তারা উচ্চস্বরে কাঁদে। এই কান্না নিয়ে অনেকে আপনার কান ভারী করে দিতে পারে। কখনও কখনও কুসংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহ দিতে পারে। কখনওবা আপনাকে ভুল পথে চালনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি আপনি কিছু না জানেন তাহলে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এখন অনলাইনে অনেক অ্যাপ পাওয়া যায় যাতে সবকিছু বিস্তারিত রয়েছে, ডাউনলোড করে নিতে পারেন, কিছুটা হলেও ভালো-মন্দ বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন, মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই। সব রোগের প্রাথমিক ও মহৌষুধ এটি। কারণ এতে রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, আয়রন, ভিটামিনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই, কোনো ক্রমেই বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ নয়।

মাস্ক নয়, ফেসশিল্ড ব্যবহার করুন

যেখানে বড়রাই নাকে-মুখে মাস্ক পরে দিশেহারা সেখানে আপনার সন্তানকে নিয়ে কি ভেবে দেখেছেন? জেনে রাখুন, নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাস হয় খুব ছোট ছোট। আবার ২ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো শিশুকে মাস্ক পরানোও উচিত নয়।

দরকারের ভিত্তিতে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে, বাচ্চার তাওয়াল শরীরে ও মাথায় সুন্দর করে পেঁচিয়ে ফেসশিল্ড পরান। করোনার এ সময়ে শিশুর টিকায় নিস্তব্ধ হয়ে থাকাটা সম্পূর্ণ বোকার পরিচয় দেয়া। রোগ প্রতিরোধের জন্য এই টিকা সময়মতো দিতে হয়। যে শিশুরা বেশ বড়, তাদের জন্য বেবি মাস্ক রয়েছে। পছন্দমতো রং ও নকশা দেখে কিনে নিন। তবে মাস্কের মান ও গ্রহণযোগ্যতায় খেয়াল রাখা উচিত।

হাত ধোয়ার অভ্যাস করান

শিশু যখন হামাগুড়ি দিতে শেখে তখনই তার হাত দিয়ে এটা সেটা ধরে। তাই, তার হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করুন। জীবাণু ধ্বংসে বিভিন্ন বেবি সোপ ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সব কিছু শেখাতে পারলে হয়তো এই শিশুরাই এক সময় বড় হয়ে অনেক সচেতন হয়ে উঠবে। আজ থেকে নিজেদের সুস্থতার পাশাপাশি শিশুর সুস্থতাও নিশ্চিত করুন।

খবর সারাবেলা / ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ / এমএম