কোয়ালিটির দিক থেকে ভারত-বাংলাদেশ সমান: মামুনুল ইসলাম

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেছেন, কোয়ালিটির দিক থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।

ভারতীয় জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম এনটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটি বলেছেন জাতীয় দলের এ তারকা ফুটবলার। তার সেই সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

মঙ্গলবার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের খেলায় ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে মাঠে নামা হয়নি মামুনুলের। সাবেক এ অধিনায়ক জাতীয় দলের খেলায় মুগ্ধ।

প্রশ্ন: কলকাতার মাঠে ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ড্র করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মামুনুল: অনেকটাই। আমরা ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলেছি। সুযোগ নষ্ট না করলে আমরা জিততেও পারতাম। তবে এই এক পয়ে‌ন্ট আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ফুটবল ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে?

মামুনুল: ফুটবল কিছুটা বদলেছে। বাংলাদেশের ফুটবলও উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ক্লাব পর্যায়ে। এএফসি ক্লাব কাপে আবাহনী সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল বড় ক্লাবকে হারিয়েই। যেখানে ভারতীয় ফুটবলে ক্লাবগুলোর রমরমা সবার জানা, আমরা তাদের হারিয়েছিলাম। তারপর থেকে এশিয়ার সেরা দলগুলোর মধ্যে আমাদের নাম ঢুকে পড়ে। কাতারের সঙ্গে ১-০ গোলে হারছিলাম, শেষে গোল হজম করতে হল। কিন্তু সেই ম্যাচটা আমরা ভালো খেলেছিলাম। এটাই প্রমাণ, আমরা উন্নতি করছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের নতুন কোচ দেশের ফুটবলে বদল আনতে পেরেছেন?

মামুনুল: এক বছর হল কোচ এসেছেন। তিনি আসায় অনেক কিছু বদলেছে। নতুন প্রজন্মকে তুলে এনেছেন। যুব প্রতিভারা দলে আসায় মরিয়া হয়ে সবাই সেরাটা দিচ্ছে। এই কোচ আমাদের দেশের জন্য যেমন সিস্টেমে খেলা সম্ভব, সেটাই নিয়ে এসেছেন দলের মধ্যে।

প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে এই ফলটা প্রত্যাশিত ছিল?

মামুনুল: উপমহাদেশের সব দলই ৫০-৫০। আগাম বলা খুব মুশকিল, কে সেরা! র‍্যাঙ্কিং খুব একটা এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। তবে ভারত-বাংলাদেশ সব সময়ই হাইভোল্টেজ ম্যাচ। ওই ৯০ মিনিট যে সেরাটা দেবে, সেই জিতবে।

প্রশ্ন: এতকিছুর পরও বাংলাদেশের থেকে ভারতের ফুটবলকে এগিয়ে রাখা হয়?

মামুনুল: ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে পরিকাঠামোতে। ভারতের ফুটবলের পরিবেশ বদলেছে। সেরা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে ভারতীয় ফুটবল দলকে। প্লেয়ারদের ক্ষেত্রে কিন্তু সুনীল ছেত্রী ছাড়া কোয়ালিটির দিক থেকে আমাদের আর ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।

প্রশ্ন: কিন্তু এই ম্যাচে তো সুনীলকে খুঁজেই পাওয়া গেল না, সে কারণেই কি আপনারা কিছুটা এগিয়ে থাকলেন?

মামুনুল: একদমই না। যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন, ভারতের পজিটিভ আক্রমণগুলো কিন্তু সুনীলের ভূমিকাতেই এসেছে। ওই আক্রমণ তৈরি করেছে।

প্রশ্ন: ভারতের ফুটবলের যে বদলের কথা বলছেন সেটা বাংলাদেশ ফুটবলে আসছে না কেন?

মামুনুল: বাংলাদেশের ফুটবলও বদলাচ্ছে। আগে অনেক কম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতাম। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, বেশি করে খেলতে। ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে আসার আগে আমরা প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলেছি; যেটা আগে হত না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের খেলায় কী উন্নতি লক্ষ্য করছেন দলের খেলায়?

মামুনুল: সেটা কোয়ালিফায়ারের শেষে বুঝতে পারব। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন না করলেও এই খেলা থেকেও তো আমরা উন্নতি করতে পারি। গতবার কোয়ালিফায়ার থেকে যদি এক পয়েন্ট পেয়ে থাকি আর এবার যদি তিন পয়েন্টে শেষ করি, তাহলে সেটাই আমাদের উন্নতি।

প্রশ্ন: আপনি যখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন, তখনও দল সাফল্য পেয়েছে। এই দলের সঙ্গে তার পার্থক্য কোথায়?

মামুনুল: আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম তখন আমরা ‘অ্যাটাকিং ফুটবল’ খেলতাম। বেশ কিছু ভালো ম্যাচ খেলেছি। এখন আমরা ‘কাউন্টার অ্যাটাক’ নির্ভর ফুটবল খেলি। সেখানে বড় বড় ম্যাচে ফল পাচ্ছি। পার্থক্য এটাই। আসল তো রেজাল্ট।

প্রশ্ন: এতদিন পর আবার কলকাতায় এসে কতটা বদল দেখতে পাচ্ছেন?

মামুনুল: অনেক! পুরো স্টেডিয়ামটাই বদলে গিয়েছে। ঝাঁ-চকচকে, দারুণ মাঠ, অসম্ভব ভালো গ্যালারি, এক দম অন্য রকম। ২০১৪ সালে এটিকে-র হয়ে খেলে গিয়েছিলাম, তারপর আবার এই এলাম। পাঁচ বছরে পুরোটাই বদলে গিয়েছে।

প্রশ্ন: আর সমর্থক?

মামুনুল: কলকাতার ফুটবল নিয়ে পাগলামির কথা গোটা বিশ্ব জানে। সেটা বদলায়নি। একই আছে। আর ওরা যখন গ্যালারি থেকে চিৎকার করেন, তখন মনে হয় আমার জন্য করছে। আর এটাই উৎসাহ যোগায়।

প্রশ্ন: এই ম্যাচটা নিয়ে কী বলবেন, বাংলাদেশ কোথায় এগিয়ে থাকল ভারতের থেকে?

মামুনুল: আমরা কোনও সুযোগ দিইনি ভারতকে। সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। আবার অনেক সুযোগ কাজেও লাগাতে পারিনি। ভারত তেমন ভাবে সুযোগ পায়নি। ছেত্রীর নিশ্চিত গোল দুটো সেভ হয়ে যাওয়াটাই আমাদের খেলায় ভীষণ ভাবে রেখে দিয়েছিল।

প্রশ্ন: কলকাতার দর্শকদের দেখে কী মনে হল, ভারত আটকে যাওয়ায় হতাশ?

মামুনুল: না, আমার মনে হয় আমাদের ৯০ মিনিটের ফুটবল দেখে তারা খুশি। কলকাতার ৫০ শতাংশ মানুষই তো বাংলাদেশের। সামনাসামনি সমর্থন করতে না পারলেও মনে মনে নিশ্চয়ই করে (হাসি)।

প্রশ্ন: এত দিন পর কলকাতায় ফিরে কেমন লাগল?

মামুনুল: কলকাতা আমার ‘সেকেন্ড হোম’। এখানে এলে মনে হয় সবাই কাছের মানুষ। পাঁচ বছর আগে যখন আইএফএ শিল্ড খেলতে এসেছিলাম, সেটাই আমার কলকাতার ফুটবলের সঙ্গে পরিচয়। সেই সময় যিনি আমাদের কমিউনিকেশন ম্যানেজার ছিলেন, এবারও তিনি ছিলেন। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন, এটাই তো প্রাপ্তি। ফুটবল খেলার। ফুটবলার হিসেবে ভালবাসা পাওয়ার।

খবর সারাবেলা/ ১৬ / অক্টোবর ২০১৯ /এসএম