কম্পিউটার ও ইংরেজি শেখার সুযোগ পাচ্ছে প্রাইমারীর শিক্ষার্থীরা

আলোকিত জনগোষ্ঠী গড়তে সারা দেশের ৫০৯টি উপজেলায় কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই ল্যাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি থাকবে ইংরেজি ভাষা চর্চার সুযোগ পাবে। চলতি বছর এপ্রিলে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয়গুলোতে ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের ৫০৯টি প্রাথমিক শিক্ষা উপজেলার একটি করে বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঁচটি করে কম্পিউটার দেয়া হবে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন পড়ালেখার পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, ল্যাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা চর্চারও সুযোগ পাবে।

জেলার প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ কার্যক্রম জেলা-উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ও থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারতের অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। দুই বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে ভারত সরকার ২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৭৩ হাজার এবং বাংলাদেশ সরকার দুই কোটি ৪১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রতিটি উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্যাব’ স্থাপন। যেসব নির্ধারিত উপজেলা শহরে বড় অবকাঠামোসম্পন্ন বিদ্যালয় রয়েছে, এমন বিদ্যালয় ল্যাবের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। আগামী মাসে এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেয়া হবে। পিডি নিয়োগের পর তার অধীনে মোট আটজন কর্মকর্তা দেয়া হবে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী বাস্তাবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক এনামুল কাদের খান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা ও ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা বাড়াতে সারাদেশের ৫০৯টি উপজেলায় একটি করে বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব স্থাপন করা হবে। গত বছর এ প্রকল্প তৈরি করা হলেও চলতি বছর ২৩ এপ্রিল একনেকে এটির অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পিডি নিয়োগ না হওয়ায় তা পিছিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

ল্যাপটপের মতো এবারও কোনো পণ্য ক্রয়ে জালিয়াতির সুযোগ আছে কি-না, জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, অধিদফতর থেকে কোনো পণ্য ক্রয় করলে তা কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। টেন্ডার অনুযায়ী সেসব ক্রয় করা হয়েছে কি-না, তা ক্রয় কমিটি যাচাই-বাছাই করে।

জানা গেছে, ল্যাব স্থাপনে এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নতমানের দুই হাজার ৫৪৫টি কম্পিউটার ক্রয় করা হবে। এর সঙ্গে প্রিন্টার, সাউন্ড সিস্টেম, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করার কথা রয়েছে। এর আগে ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপনে সারাদেশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য উন্নতমানের চার হাজার ল্যাপটপ কেনা হয়। অথচ এক মাস পরেই সেসব ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে অধিদফতরে ফেরত আসতে শুরু করে। ওই প্রকল্পে নিম্নমানের পণ্য ক্রয় হয় বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তা-ই নয়, ল্যাপটপ চালাতে মাইক্রোসফট কোম্পানির প্রতিটি অর্জিনাল সফটওয়্যারের জন্য ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু বাস্তবে নকল সিডি কেনার প্রমাণ মেলে। পরে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অনিয়মের প্রমাণ পেলেও শাস্তি হিসেবে শুধুমাত্র ডিপিই’র গঠিত ক্রয় কমিটির কয়েকজন সদস্যকে পরিবর্তন করা হয়। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে সে সময়ও অভিযোগ ওঠে।

খবর সারাবেলা / ১৯আগস্ট ২০১৯ / টি আই