এক বছর হয়ে গেল কবরী নেই

ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ সারাহ বেগম কবরী। একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী এবং রাজনীতিক। তার ঝুঁলিতে আছে আজীবন সম্মাননাসহ দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একাধিক বার পেয়েছেন ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ এবং ‘বাচসাস’ পুরস্কার। অভিনয় ও রাজনীতির পাশাপাশি করেছেন পরিচালনার কাজও। কিন্তু এমন একজন নক্ষত্র আমাদের মাঝে নেই একটি বছর হয়ে গেল। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।

গত বছর মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কবরী। ১৩ দিন ভর্তি ছিলেন রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে। অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৭ এপ্রিল চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তাকে দাফন করা হয়েছিল রাজধানীর বনানী কবরস্থানে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী ও রাজনীতিক কবরী। সেখানে তিনি বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এসব বিবেচনায় দাফনের আগে বাংলাদেশ সরকার তার সম্মানে দিয়েছিল ‘গার্ড অব অনার’।

গত বছরের ১৭ এপ্রিল কিংবদন্তি এই তারকার মৃত্যুর খবরে বিনোদন জগতে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। কালজয়ী এ অভিনেত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এক শোক বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘এদেশের চলচ্চিত্রে কবরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

এদিকে, কবরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে রবিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। সঙ্গে দিয়েছেন কবরীর সঙ্গে তোলা একাধিক ছবি। লিখেছেন, ‘আপনার প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি প্রিয় কবরী আপা। অনেক ভালোবাসা সবসময় আপনার প্রতি। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম স্বর্ণমুকুট হয়ে রয়ে যাবেন অনন্তকাল বাংলা সিনেমাপ্রেমী সবার হৃদয়ে।’

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম হয়েছিল কবরীর। তার আগের নাম ছিল মিনা পাল। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মিনা পাল থেকে কবরী হয়ে উঠেন তিনি। পরিচিতি পান ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ হিসেবে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কবরী।

অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৬ সালে ‘আয়না’ নামে একটি চলচ্চিত্রের পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্মাণে অভিষেক ঘটে কবরীর। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ না‌মে দ্বিতীয় চল‌চ্চিত্র নির্মাণ হাত দিয়েছিলেন তিনি। সেটি মুক্তির আগেই চলে যান না ফেরার দেশে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কবরী।

খবর সারাবেলা / ১৭ এপ্রিল ২০২২ / এমএম