আমিরাতে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ, যা করতে হবে বাংলাদেশিদের
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ হয়ে পড়া বসবাসকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। দুই মাসের সাধারণ ক্ষমা চলাকালে কোনো জরিমানা ছাড়া অবৈধ অভিবাসী বা প্রবাসীরা বৈধ হতে অথবা নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। খবর খালিজ টাইমস। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে আমিরাতের আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ (আইসিপি)।
মেয়াদ শেষ হওয়া রেসিডেন্সি ভিসা থেকে শুরু করে পর্যটনসহ সব ভিসা এই সাধারণ ক্ষমতার আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আইসিপি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া যেসব অভিবাসীর সন্তান জন্ম হয়েছে; কিন্তু কাগজপত্র করা হয়নি। তারাও বৈধ কাগজপত্র করতে পারবেন।
আইসিপি জানায়, যারা আমিরাতে অবৈধভাবে আছেন তারা যদি বৈধ হতে অথবা নিজ দেশে ফিরতে চান তাদের জন্য এটি সবচেয়ে বড় সুযোগ। যারা দেশে ফিরবেন তারা চাইলে বৈধ ভিসা নিয়ে যে কোনো সময় আবারও আমিরাতে আসতে পারবেন। আইসিপি আরও বলেছে, যারা অবৈধ থেকে বৈধ হবেন তাদের কাছ থেকে ভিসার মেয়াদের তুলনায় বেশি সময় অবস্থান করার জন্য কোনো ধরনের জরিমানা এবং যারা নিজ দেশে ফিরবে তাদের থেকে কোনো এক্সিট ফি নেওয়া হবে না।
যা করতে হবে বাংলাদেশিদের
বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেল দুবাই ভবনে কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বুধবার আমিরাতে বসবাসরত অবৈধ হয়ে পড়া রেসিডেন্স ভিসাধারীদের বিনা জেল জরিমানায় অবস্থান বৈধকরণ কিংবা দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জাাননো হয়, আরব আমিরাতে এই সাধারণ ক্ষমা ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। বিভিন্ন কারণে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা, যাদের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তারা এই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাবেন।
সাধারণ ক্ষমা সেবা পেতে দুবাইয়ের ভিসাধারীদের আল-আবির ইমিগ্রেশনে এবং অন্যান্য আমিরাতের ভিসাধারীদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রদেশের ইমিগ্রেশনে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে ইউএই সরকার অনুমোদিত টাইপিং তাসহিল/আমের সেন্টারে যেতে হবে। দেশে যাওয়ার জন্য এক্সিট পারমিট পেতে মূল পাসপোর্ট এবং দূতাবাস/কনস্যুলেট হতে ট্রাভেল পারমিট লাগবে।
ভিসাবিহীন থাকার জন্য কাউকে সাধারণ ক্ষমা চলাকালে কোনো জরিমানা দিতে হবে না। তবে ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছেন, তারা পাসপোর্ট/বাংলাদেশি হিসেবে কোনো প্রমাণক/সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রমাণক ও পূর্ববর্তী ভিসার তথ্য দিয়ে কনস্যুলেট/দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিট নিতে পারবেন।
ভিসা নিয়মিত করা ও দেশে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এক্সিট পারমিটের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। এক্সিট পারমিট প্রাপ্তির পর ১৪ দিন তার মেয়াদ থাকবে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে বায়োমেট্রিক্স স্ক্যান করার পর এক্সিট পারমিট ইস্যু করা হবে। সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে ভিসা রেকর্ড চেক করার পর কেউ যদি পলাতক/তা’মিম হয়ে থাকেন, তাহলে দেশে যাওয়ার জন্য এক্সিট পারমিট অথবা ভিসা নিয়মিত করার জন্য পুলিশ রিপোর্ট লাগবে। তবে সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন এক্সিট পারমিট নিয়ে দেশে গেলে কোনো প্রকার ব্যান/নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না। সাধারণ ক্ষমার সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য আদালত থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।
প্রবাসীদের যাদের বিরুদ্ধে নিয়োগকর্তা হতে পলাতক/তা’মিম রিপোর্ট আছে তারা সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদন করতে পারবেন কিনা- এ বিষয়ে কনসাল জেনারেল বলেন, “মামলার ধরনের ওপর তা নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে পলাতক/তা’মিম রিপোর্ট আপডেট করে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দেশে যাওয়ার জন্য এক্সিট পারমিট ইস্যু করবেন।”
আবেদনকারী কীভাবে তার পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, যা স্পন্সর কর্তৃক ইমিগ্রেশনে জমা দেওয়া হয়েছে- এ বিষয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে যোগাযোগ করা হলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট হস্তান্তর করবে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কিছু সংখ্যক পাসপোর্ট কনস্যুলেটে/দূতাবাসে হস্তান্তর করেছে যা কনস্যুলেটে/দূতাবাসে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করা যাবে। আবেদনকারী জরিমানা মওকুফ ও ভিসা নিয়মিতকরণ কার্যক্রম শেষ করে সরাসরি কর্মসংস্থান ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে গিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা/আইডি কপি দাখিল করে প্রসেসিং ফি প্রদানের মাধ্যমে জরিমানা মওকুফ করা হবে এবং ছয় মাস মেয়াদি জব সিকার্স ভিসা ইস্যু করা হবে।
আমিরাতে বাংলাদেশিদের সাধারণ ভিসা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ প্রত্যাশীদের জন্য কি করণীয়- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন সাময়িকভাবে নতুন ভিসা প্রদান বন্ধ থাকবে। অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি যাদের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তারা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাবেন। যারা ভিজিটে এসে ভিসা লাগায়নি তারা সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন।
অবৈধপথে যারা আমিরাতে প্রবেশ করেছে তারা পাসপোর্ট/বাংলাদেশি হিসেবে কোনো প্রমাণক/সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রমাণক ও পূর্ববর্তী ভিসার তথ্য প্রদানপূর্বক কনস্যুলেট/দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিট নিতে পারবেন।
খবর সারাবেলা / ৩১ আগস্ট ২০২৪ / এমএম