আমদানি করা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই নীতিমালায় স্বর্ণ ডিলাররা স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির পর সেগুলো কিভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বৈঠক হয়েছে। এতে এনবিআরের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বলা হয়, স্বর্ণ নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বর্ণ বার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির জন্য ডিলার নিয়োগ করবে। ডিলাররা স্বর্ণ আমদানির পর সেগুলো কমিশন ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে। এক্ষেত্রে কমিশনের হার হবে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ডিলারদের স্বর্ণ আমদানি করতে যে খরচ হবে তার সঙ্গে আরও ১০ শতাংশ কমিশন যোগ হবে। এর ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হবে। এর মধ্যে স্বর্ণের দাম, এজেন্ট খরচ, পরিবহন, কর তথা আমদানি বাবদ সব খরচ অন্তর্ভুক্ত হবে।
এদিকে স্বর্ণ ব্যবসায় শৃঙ্খলা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হবে। সে অনুযায়ী এতে এনবিআর ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতি সহযোগিতা করবে। এতে আমদানির বার্ষিক চাহিদা, ক্রয়-বিক্রয়, দোকানের সংখ্যা, সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমাদানের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ থাকবে। একই স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সব ধরনের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যভাণ্ডারে সরবরাহ করার অনুরোধ করা হয়। এতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করতে গ্রাহকের নামে বরোয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিন) দেয়া হবে। এর ভিত্তিতে গ্রাহকদের শনাক্ত করা হবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ও ডিলাররা এই নম্বর পাবেন। এর ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এনবিআর সময় সময় এ খাতে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের কাছে কি পরিমাণ স্বর্ণ জমা আছে তার তথ্য সংগ্রহ করেছে এনবিআর। এসব তথ্যের সঙ্গে আমদানি করা স্বর্ণ যোগ হবে।
বর্তমানে স্বর্ণ ব্যবসায়ে কোনো শৃঙ্খলা নেই। দেশের স্বর্ণের ছড়াছড়ি, কিন্তু স্বর্ণ আমদানি হচ্ছে না। তার পরও দেশে চলছে স্বর্ণের বিশাল ব্যবসা। এসব খাতে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি) বারবার বলে আসছে স্বর্ণ ব্যবসাকে নিয়মের আওতায় আনতে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে স্বর্ণ আমদানি করে সেগুলো দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করে দেশের বাজারে বিক্রি ও রফতানি করতে। এর অংশ হিসেবেই স্বর্ণ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। ওই নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে এখন স্বর্ণের বার ও অলঙ্কার আমদানির জন্য ডিলার নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিলাররা স্বর্ণ আমদানি করে সেগুলো অনুমোদনপ্রাপ্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে। সেগুলো দিয়ে ব্যবসায়ীরা অলঙ্কার তৈরি করে সেগুলো রফতানি ও দেশের বাজারে বিক্রি করবে। স্বর্ণকে ডিম্যাট বা তরলিকরণ (ইলেকট্রনিক) করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ইলেকট্রনিক ফরমে থাকবে কার কি পরিমাণ স্বর্ণ আছে।