আধা পাকা ও টিনের ১৫টি বসতঘর মেঘনায় বিলীন

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে মেঘনার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে ভাঙনে শহর রক্ষা বাঁধের পুরান বাজারের হরিসভা এলাকার অন্তত ২০০ মিটার জায়গায় পাথরের ব্লক ধসে পড়েছে। এতে আধা পাকা ও টিনের ১৫টি বসতঘর মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনের মুখে রয়েছে হরিসভাসহ এলাকার চারটি মন্দির ও সড়ক। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বেশ কিছু বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা, চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ৯টার দিকে চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারের হরিসভা এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে মেঘনার তীব্র ভাঙন আকার ধারণ করে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধটির অন্তত ২০০ মিটার এলাকায় বসানো পাথরের ব্লক নদীতে ধসে পড়ে। এ সময় বাঁধসংলগ্ন ১৫ ব্যক্তির বসতঘর মালপত্রসহ মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়। যেসব ব্যক্তির ঘর বিলীন হয়েছে তাঁরা হলেন ওই এলাকার গোপীনাথ সাহা, আদিনাথ সাহা, শম্ভুনাথ দে, সুশান্ত দে, মানিক সাহা, সঞ্জয় চক্রবর্তী, বিমল দে, দীপক দে, ধ্রুবরাজ সাহা, সুনীল দে, শ্যামল দে, ওয়াজেদ আলী শেখ, অঞ্জু শেখ, আমজাদ আলী মুন্সী ও কার্তিক সাহা। খবর পেয়ে চাঁদপুর পাউবো কর্তৃপক্ষ এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পাউবোর উদ্যোগে সেখানে পাঁচ শতাধিক বালুর জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত গোপীনাথ সাহা, আদিনাথ সাহাসহ আরও কয়েকজন বলেন, কয়েক দিন ধরেই তাঁদের এলাকায় মেঘনার ভাঙন চলছে। বিষয়টি স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ মেঘনার ভাঙন বেড়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁদের ঘরবাড়ি মেঘনার গর্ভে চলে যায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকমে তাঁরা অন্যত্র চলে যান। আশপাশের এলাকাও ভাঙতে থাকে। এই খবর শনিবার রাতেই প্রশাসনকে জানানো হয়।

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর পর ওই এলাকায় মেঘনার ভাঙন দেখা দিলে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়। স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি স্থানটি রক্ষায় বিশেষ বরাদ্দও দেন। তিনি অভিযোগ করেন, পাউবোর নিয়োজিত ঠিকাদার সঠিকভাবে ও সময়মতো কাজ শেষ না করায় ভাঙনের এ ঘটনা ঘটেছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ভাঙনের খবর পাওয়ামাত্র সেখানে যান এবং পাউবোর সহায়তায় সেখানে পাঁচ শতাধিক বালুর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভাঙনকবলিত এলাকায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে শনিবার রাতেই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

পাউবোর চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, পুরান বাজারের ওই এলাকা প্রতিবছরই মেঘনার ভাঙনের শিকার হচ্ছে। এবারের ভাঙন রোধে আপাতত অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরে পাথরের ব্লক বসিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

খবর সারাবেলা / ০৫ আগস্ট ২০১৯ / টি আই