অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রবাসীদের চাওয়া
দীর্ঘ ১৫ বছর পর ক্ষমতার পালাবদলে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান-সেই বিষয়ে জার্মানি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে কথা বলেছে কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে।
লন্ডনে কর্মরত সাইবার-সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট রূপক চৌধুরী প্রতীক বলেন, ‘এই সরকার যেন নীতি-নির্ধারণের সময় বিগত সরকারের ব্যর্থতাগুলো আমলে নিয়ে পরবর্তী কর্ম-পরিকল্পনা নির্ধারণ করে।’ তার আশা, এই সরকার তরুণদের মেধা কাজে লাগিয়ে সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেখানে দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থ সবসময় প্রাধান্য পাবে।
জার্মানির বার্লিনে বসবাসরত সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক ড. উম্মে সালমা সুলতানা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তার চাওয়া খুব স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই যেন সমান অধিকার পায়। এই দেশে যেমন ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন, তেমনি নাস্তিকও আছেন, মুক্তমনা অনেক মানুষ আছেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য আইন যেন সমান হয়। সবারই যেন নিজেকে প্রকাশ করার সামাজিক স্বাধীনতা থাকে।’
সৌদি আরবের জেদ্দায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি ম্যানেজার আকিব উদ্দিন রাব্বি মনে করেন, প্রবাসীদের প্রতি দেশের সরকার ও তার কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া উচিত। আকিব উদ্দিন জানান, দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর উচিত প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করা। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত থাকলেও সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা না করে উল্টো আমাদের ভাইদের উপর দোষারোপ করেন। বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর চ্যানেলগুলো নিশ্চিত করা গেলে, রেমিট্যান্সের পরিমাণও তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যাবে।’
আকিব উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের উচিত বিমান বাংলাদেশের সেবার মান উন্নয়ন ও ভাড়া সঠিকভাবে নির্ধারণ করা। তাহলে অন্যান্য বিমান সংস্থার বিমানে না যেয়ে প্রবাসীরা বিমান বাংলাদেশে যেতে উৎসাহিত হবে।’ পাশাপাশি তিনি বিমানবন্দরে লাগেজ হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে পদে পদে প্রবাসীদের যে ধরনের হয়রানি করা হয়, তা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যের পাবলিক হেলথ সার্ভিস বিভাগে কর্মরত মনীষা দে বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ হবে বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থার উন্নতি করে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা। তিনি বলেন, ‘দেশে যেন সবাই নিরাপদ বোধ করতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কার্যকর ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।’
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ কোলনের নর্থ অ্যামেরিকান স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত কাজী ইশরাত জাহান বিপাশা গুরুত্ব দেন মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের উপর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশে যেখানে অনেক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে, সেখানে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সব স্তরের মানুষের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকলে তা মানুষকে অনেকটা স্বস্তি দিবে বলে আশা করি।’ দেশের জনগণ যেন নিরাপদে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারে তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি।
খবর সারাবেলা / ১৪ আগস্ট ২০২৪ / এমএম