নিজস্ব কার্ডের বাইরে লেনদেন স্থগিত

দেশের ব্যাংকিং খাতে সম্ভাব্য সাইবার হামলা ঠেকাতে আরও বেশি সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এরই অংশ হিসেবে এক ব্যাংকের এটিএম বুথে নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য ব্যাংকের কার্ডে সব ধরনের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।

একই সঙ্গে এটিএম বুথগুলোতে ব্যাংকিং সেবার ধরনও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। নগদ টাকা তোলা ছাড়া অন্য ব্যাংকের বা গ্রাহকের হিসাবে টাকা স্থানান্তরে লাগাম টানা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো সব ধরনের অনলাইন, সুইফট, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এদিকে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাংকিং লেনদেনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে লেনদেন কমে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক লেনদেনে ধাক্কার পর ম্যালওয়ার ভাইরাসের হামলা প্রতিরোধে এলো আরেকটি বাধা।

সূত্র জানায়, ম্যালওয়্যার ভাইরাসটি দেশের যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কোম্পানির সার্ভারে সাইবার হামলা করেছে সেটি মেরামতের কাজ চলছে। একই সঙ্গে আরও যে দুটি ইন্টারনেট প্রটোকলে (আইপি) ম্যালওয়্যারের অস্তিত্ব মিলেছে সেগুলোকেও ব্লক করার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) কাজ করছে। সার্টের সাইভার বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, অচিরেই ম্যালওয়্যার ভাইরাসগুলো ক্লিন করে ফেলা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বিসিসির পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, সাইভার ল্যাবে তারা ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন ম্যালওয়্যার ভাইরাসটি ব্যাংকের এটিএম বুথ ও পয়েন্ট অব সেল (পস) মেশিনের তথ্য খুঁজে বেড়ায়। ভাইরাসটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তারা এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য খুঁজছে না। আগে থেকে সতর্ক হওয়ায় ভাইরাসটি দেশের ভেতরে কাজ করতে পারেনি। তারপরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে, কোনো অসঙ্গতি পেলে সার্টকে জানাতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সাইবার হামলা প্রতিরোধে প্রায় সব ব্যাংকই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে এটিএম সেবার সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। এর পরই রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। ক্রেডিট কার্ড সেবা সবচেয়ে বেশি রয়েছে সিটি ব্যাংকের। এছাড়া সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংকসহ প্রায় সব ব্যাংকই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রাহকদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে জানিয়েছে তাদের সব এটিএম সেবা রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে তাদের এটিএম সেবায় ব্যাংকের নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকের কার্ডে লেনদেন করা যাবে না।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক জনবহুল এলাকায় রাত ১১টার পর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথ বন্ধ রাখছে। গ্রামে রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বন্ধ রাখছে। এছাড়া নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের কার্ডে লেনদেন বন্ধ রেখেছে।

অন্য ব্যাংকগুলোও এসব ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রায় সব ব্যাংকই রাত ৮টার পর সুইফট ও ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ সিস্টেমস বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে অনলাইন লেনদেনও সীমিত হয়ে আসছে। আগে সুইফটে সব সময় লেনদেন করা যেত। এজন্য ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক বিভাগ বা ডিলিং রুম (যে রুমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে যন্ত্রপাতি রয়েছে) সার্বক্ষণিকভাবে খোলা থাকত। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচেও সব সময় লেনদেন করা যেত। ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিও সীমিত করে আনা হয়েছে।

আগে এটিএম বুথগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকত। ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সব ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেন করা যেত। এখন সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেবল যেসব ব্যাংক কার্ড ইস্যু করেছে ওই ব্যাংকের এটিএম বুথে ব্যবহার করা হবে। অন্য কোনো ব্যাংকের বুথে ব্যবহার করা যাবে না। চাইনা ইউনিয়নের পে কার্ডেও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী আর্থিক খাতে সাইবার হামলা হতে পারে মার্কিন বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সাইবার ইউনিটের এমন সতর্কতা জারির পর বিশ্বব্যাপীও আর্থিক খাতগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এফবিআইয়ের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের গোয়েন্দারা ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে জানতে বিশদভাবে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাইবার গোয়েন্দারাও কাজ করছেন।সূত্র জানায়, ভাইরাসটি উত্তর কোরিয়া থেকে এসেছে এমনটি মনে করা হলেও এর পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।

খবর সারাবেলা / ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ / এমএম