খ্যাতিমান দুই তারকার প্রয়াণে সংগীত জগতে বিরাট শূন্যতা
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের সংগীত জগৎ থেকে খসে পড়ল দুই তারকা। একজন ‘মাইলস’ ব্যান্ডের মেইন ভোকাল শাফিন আহমেদ, অন্যজন শাফিনের সমসাময়িক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। দুজনেই নব্বইয়ের দশকে তাদের কণ্ঠের দ্যুতি ছড়িয়ে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সংগীতকে। গত ২৫ জুলাই সকালে হঠাৎই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে ভেসে ওঠে, গায়ক শাফিন আহমেদ আর নেই। এদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
জানা যায়, একটি কনসার্টে অংশ নিতে ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে যান শাফিন আহমেদ। গত ২০ জুলাই ছিল সেই কনসার্ট। তার আগেই হার্ট অ্যাটাক করেন শাফিন। তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চলে যান না ফেরার দেশে, যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না। মৃত্যুর পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শাফিনের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসেন তার স্ত্রী রুমানা দৌলা। মঙ্গলবার যোহর বাদ গুলশানের আজাদ মসজিদে হয় শিল্পীর জানাজা। বিকাল সোয়া তিনটায় বনানী কবরস্থানে বাবা কমল দাশগুপ্তের কবরে দাফন করা হয় শাফিনকে।
এর আগে ২০১৯ সালে কক্সবাজারে একটি কনসার্টে গিয়ে প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয় এই গায়কের। তখন তিনি সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন এবং বুকে পেসমেকার বসানো হয়। এমনকি তার শরীরে সেসময় কোনো পালস না পাওয়ায় ইলেকট্রিক শক্ড দিতে হয়েছিল। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও এবার ফিরলেন না। শাফিনকে হারানোর শোক না কাটতেই মঙ্গলবার দুপুরে আরেক জনপ্রিয় গায়ক জুয়েলের মৃত্যুর খবর আসে। গত ২৩ জুলাই থেকে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এদিন গায়কের স্ত্রী সঙ্গীতা জানান, ২০১১ সালে জুয়েলের লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও ক্যানসার সংক্রমিত হয়। তখন থেকেই দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। তারই মধ্যে গত ২৩ জুলাই তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় জুয়েলের। তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। তার শারীরিক অবস্থা খাবার দেখে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে প্রয়াত জুয়েলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয় বনানী কবরস্থানে। একই কবরস্থানে কয়েক ঘণ্টা আগেই দাফন করা হয় শাফিন আহমেদকে।
এত কম সময়ের ব্যবধানে খ্যাতিমান দুই শিল্পীকে হারিয়ে বাংলোদেশের সংগীত জগতে এক বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। শাফিন ও জুয়েলের মৃত্যুতে শোক জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও শোক জানিয়েছেন নগরবাউল ব্যান্ডের জেমস, সুরকার প্রিন্স মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী। শাফিন আহমেদ এবং জুয়েল- দুজনেই নব্বইয়ের দশকে বেশ আলো ছড়িয়েছেন সংগীত জগতে। এর মধ্যে শাফিন গানের পাশাপাশি প্রথমে এনডিএম এবং পরে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জুয়েল যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-কেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায়।
খবর সারাবেলা / ৩১ জুলাই ২০২৪ / এমএম